অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) নিয়ে বসবাসরত শিশুদের শেখার প্রক্রিয়া সাধারণ শিশুদের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে। তারা সাধারণত পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সামাজিক পরিস্থিতিতে অসুবিধায় পড়ে, যার কারণে তাদের শেখার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়। অটিজম শিশুদের জন্য বিশেষ পদ্ধতি এবং কৌশল প্রয়োগ করে শেখানো যেতে পারে।
এখানে অটিজম শিশু কিভাবে শিখে এবং তাদের শেখানোর সঠিক পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
অটিজম শিশুর শেখার বৈশিষ্ট্য
অটিজম শিশুদের শেখার ধরণ সাধারণত তাদের বিশেষ চাহিদা এবং তাদের উপলব্ধি ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে, তারা দৃশ্যমান তথ্য থেকে দ্রুত শিখতে পারে, কিন্তু সামাজিক ও মৌখিক নির্দেশনা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে। এই শিশুদের কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:
১. ভিজ্যুয়াল শেখার প্রয়োজন
অটিজম শিশুরা চিত্র, গ্রাফ, ভিডিও বা দৃশ্যমান অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে বেশি শিখতে পারে। লিখিত বা মৌখিক নির্দেশনা তাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে, তাই ছবি বা চার্ট ব্যবহার করে শেখানোর চেষ্টা করা উচিত।
২. রুটিন ভিত্তিক শেখা
অটিজম শিশুদের জন্য রুটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রতিদিন একই রুটিন অনুসরণ করে শেখার প্রক্রিয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই তাদের শেখানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিনের কার্যক্রমের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করা জরুরি।
৩. হাতে-কলমে শেখা (Hands-on Learning)
অটিজম শিশুরা তাত্ত্বিক শেখার পরিবর্তে হাতের কাজের মাধ্যমে দ্রুত শিখতে পারে। তাদের হাতে-কলমে কাজ করিয়ে শেখানোর চেষ্টা করলে তারা বিষয়গুলো বেশি ভালোভাবে বুঝতে পারে।
৪. সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক দক্ষতার সীমাবদ্ধতা
এই শিশুদের সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকে। তারা প্রায়ই কথোপকথনে জড়াতে দ্বিধাবোধ করে, ফলে সরাসরি শেখার চেয়ে অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতির মাধ্যমে শেখানো কার্যকর হয়।
অটিজম শিশুদের শেখানোর কার্যকর কৌশল
১. ভিজ্যুয়াল এড ব্যবহার করুন
চিত্র, ভিডিও, ফ্ল্যাশকার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করে শেখানো যেতে পারে। অটিজম শিশুরা সহজেই ভিজ্যুয়াল এডের মাধ্যমে বিষয়বস্তু বুঝতে পারে এবং প্রয়োগ করতে পারে। তাদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা ছবি বা ভিজ্যুয়াল চিত্র ব্যবহার করলে বিষয়বস্তু বোঝা সহজ হয়।
২. রুটিন নির্ধারণ করুন
অটিজম শিশুদের জন্য একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রমের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে চলতে শেখান। একই সময়ে প্রতিদিন একই কাজ করানো তাদের শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
৩. প্রশংসা ও পুরস্কার প্রদান করুন
যখনই তারা কোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে, তখন তাদের প্রশংসা বা পুরস্কার দিন। এটি তাদের মনোবল বাড়িয়ে দেবে এবং তারা আরও ভালো শেখার জন্য আগ্রহী হবে। ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাদের শেখার প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।
৪. স্পষ্ট নির্দেশনা দিন
অটিজম শিশুরা সরল এবং পরিষ্কার নির্দেশনা বুঝতে পারে। তাদের ছোট এবং সুনির্দিষ্ট বাক্যে নির্দেশনা দিন। বড় বা জটিল বাক্য ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
৫. সামাজিক দক্ষতা শেখানোর প্রচেষ্টা
যদিও অটিজম শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ কঠিন হতে পারে, তবে তাদের ছোট ছোট গ্রুপে নিয়ে সামাজিক দক্ষতা শেখানোর চেষ্টা করুন। এটি ধীরে ধীরে তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াবে এবং তারা সমাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
৬. আচরণগত থেরাপি প্রয়োগ করুন
Applied Behavior Analysis (ABA) এর মতো থেরাপি ব্যবহার করে অটিজম শিশুদের আচরণগত সমস্যা মোকাবিলা করা যায়। এই থেরাপির মাধ্যমে তারা সহজে শেখার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারে এবং সঠিক আচরণ শিখতে পারে।
উপসংহার
অটিজম শিশুদের শেখার ধরণ সাধারণত ভিজ্যুয়াল, রুটিন ভিত্তিক এবং হাতে-কলমে কাজের ওপর নির্ভরশীল। তাদের শেখার পদ্ধতি সাধারণ শিশুদের থেকে আলাদা হলেও সঠিক কৌশল প্রয়োগ করলে তারা সফলভাবে শিখতে সক্ষম হয়। ধৈর্য, বোঝাপড়া, এবং ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে অটিজম শিশুদের শেখানো সম্ভব।