অটিজম আক্রান্ত বিশেষ শিশুদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজে অনেক ধরণের চ্যালেঞ্জ থাকে। ড্রেসিং বা পোশাক পরানো এবং পরিধান করা তাদের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অটিজম শিশুদের ড্রেসিং চ্যালেঞ্জের কারণে তাদের অনেক সময় অস্বস্তি, হতাশা বা অতিরিক্ত চঞ্চলতার সম্মুখীন হতে হয়। সঠিক পদ্ধতি এবং যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো কমানো সম্ভব।
অটিজম শিশুদের ড্রেসিং সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ
- সেন্সরি ইস্যু: বিশেষ শিশুদের অনেকের ক্ষেত্রে সেন্সরি সমস্যা থাকে। নতুন বা খসখসে কাপড়, আঁটসাঁট পোশাক, বা নির্দিষ্ট কাপড়ের টেক্সচার তাদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
- মোটর স্কিলের সীমাবদ্ধতা: ড্রেসিং করার সময় বোতাম লাগানো, জিপার টানা, বা মোজা পরানোর মতো কাজগুলো তাদের জন্য কঠিন হতে পারে, কারণ অটিজম শিশুরা অনেক সময় তাদের মোটর স্কিলে সীমাবদ্ধতা অনুভব করে।
- রুটিন ভাঙার অস্বস্তি: অটিজম শিশুরা নতুন পরিস্থিতি বা নতুন কাপড় পরিধান করার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিরক্তি বা অস্বস্তি বোধ করে।
- স্বাধীনতা না থাকা: বিশেষ শিশুদের অনেক সময় স্বাধীনভাবে পোশাক পরানোর সুযোগ দেওয়া হয় না। এতে করে তারা আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে যায়।
বিশেষ শিশুর ড্রেসিং সহজ করার উপায়
- কমফর্টেবল ও সেন্সরি ফ্রেন্ডলি কাপড় নির্বাচন: বিশেষ শিশুদের জন্য এমন কাপড় নির্বাচন করা উচিৎ যা নরম এবং সেন্সরি সংবেদনশীলতার সাথে খাপ খায়। স্প্যানডেক্স বা তুলার তৈরি হালকা কাপড় বেশ আরামদায়ক হতে পারে।
- সহজ ডিজাইনের পোশাক: বোতাম বা জিপারের পরিবর্তে সহজ স্লিপ-অন বা ভেলক্রো লাগানো পোশাক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে তারা নিজেরাই সহজে পোশাক পরতে পারবে।
- প্র্যাকটিসের সুযোগ দেওয়া: ড্রেসিং একটি শেখার বিষয়। বিশেষ শিশুকে ধীরে ধীরে ড্রেসিং করতে শিখিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে ড্রেসিং এর জন্য কিছুটা সময় রেখে দেওয়া উচিৎ।
- রুটিন অনুসরণ করা: শিশুকে প্রতিদিন একই রুটিনে ড্রেসিং করানো গেলে তাদের মানসিক চাপ কমে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। শিশুর জন্য নিয়মিত ড্রেসিং রুটিন তৈরি করা যেতে পারে।
- ভিজ্যুয়াল সাপোর্ট ব্যবহার: শিশুকে ড্রেসিং শেখানোর জন্য ছবি বা ভিডিও এর সাহায্যে ধাপে ধাপে বুঝিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
- অতিরিক্ত সময় দেওয়া: ড্রেসিং করার সময় বিশেষ শিশুকে একটু বেশি সময় দিতে হবে। দ্রুততার সাথে তাদের কাজ শেষ করতে বলা উচিত নয়।
অটিজম শিশুর যত্নে ড্রেসিং এর ভূমিকা
- স্বনির্ভরতা বাড়ানো: বিশেষ শিশুদের ড্রেসিং করতে সহায়তা করা মানে তাদের স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নেওয়া। নিয়মিত প্র্যাকটিসের মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে নিজেই ড্রেসিং করতে শিখবে।
- মোটর স্কিল উন্নয়ন: ড্রেসিং করতে করতে শিশুদের মোটর স্কিল উন্নত হয়। এতে তাদের দৈনন্দিন কাজে হাত, আঙ্গুল এবং চোখের সমন্বয় তৈরি হয়।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: ড্রেসিং এর ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা শিশুর জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। নিজে নিজে কাজ সম্পন্ন করার অনুভূতি তাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করে।
উপসংহার
অটিজম শিশুদের ড্রেসিং এর সময় ধৈর্য্য এবং যত্নের প্রয়োজন। সঠিক পোশাক এবং সহায়ক পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের ড্রেসিং সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব। প্রতিটি শিশুর প্রয়োজনের সাথে মিল রেখে কাস্টমাইজড যত্ন প্রদান করে তাদের প্রতিদিনের জীবন সহজতর করা যাবে।