অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য সঠিক পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অটিস্টিক শিশুর খাবারের প্রতি স্পর্শকাতরতা থাকতে পারে, যা তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সমস্যা তৈরি করতে পারে। সঠিক খাদ্য গ্রহণ না করলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে পড়তে পারে। তাই অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি সুষম ও পরিমিত খাবার ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
অটিজম আক্রান্ত শিশুদের খাদ্য সমস্যাগুলি:
১. খাবারের প্রতি স্পর্শকাতরতা: অটিজম আক্রান্ত শিশুদের অনেক সময় গন্ধ, স্বাদ, বা খাবারের টেক্সচার নিয়ে সমস্যা হয়। ফলে তারা নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি অনীহা প্রকাশ করতে পারে।
২. বেছে খাওয়ার প্রবণতা: এই শিশুরা প্রায়ই খুব সীমিত কয়েকটি খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখায় এবং বাকি সব খাবার এড়িয়ে চলে। এতে করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান কমে যেতে পারে।
৩. জিআই (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল) সমস্যা: অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে প্রায়শই পেটের সমস্যা, যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসের সমস্যা বা হজমের সমস্যায় ভোগার প্রবণতা থাকে, যা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে প্রয়োজন।
সঠিক পুষ্টি বজায় রাখার জন্য খাবারের পরামর্শ:
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাদ্যাভ্যাস অটিস্টিক শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত।
২. প্রোটিন: মাংস, মাছ, ডিম, সয়াবিন, ও বাদাম প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রোটিন শরীরের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
৩. ফল ও সবজি: সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, এবং আঁশযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সহায়ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা শরীরকে সুস্থ রাখে।
৪. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছ (বিশেষ করে স্যামন ও টুনা), আখরোট, চিয়া সিডস ও ফ্ল্যাক্সসিডস ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস। এটি মস্তিষ্কের বিকাশ ও কার্যকারিতায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫. গ্লুটেন ও কেসিনমুক্ত খাদ্য: অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশুরা গ্লুটেন (গম, বার্লি) এবং কেসিন (দুধের প্রোটিন) এ অ্যালার্জি বা স্পর্শকাতরতা অনুভব করে। তাই অনেক অভিভাবক গ্লুটেন এবং কেসিন মুক্ত খাদ্য প্রদান করে থাকেন।
৬. পানি ও হাইড্রেশন: হাইড্রেশন শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
অটিজম আক্রান্ত শিশুর খাদ্যাভ্যাস তৈরিতে কিছু টিপস:
১. ধীরে ধীরে নতুন খাবার পরিচিত করুন: যদি শিশু কোনো নির্দিষ্ট খাবার পছন্দ না করে, তবে সেটি জোর করে না খাইয়ে, ধীরে ধীরে অল্প পরিমাণে খাবার পরিচিত করানো যেতে পারে। নতুন খাবারকে তাদের পরিচিত খাবারের সাথে মিশিয়ে বা ছোট অংশে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
২. নিয়মিত খাবারের সময়সূচি তৈরি করুন: শিশুদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে খাবার প্রদান করা উচিত। এতে তাদের হজমের সমস্যা কম হয় এবং তারা খাবারের প্রতি অভ্যাস তৈরি করে।
৩. খাবার নিয়ে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন: শিশুদের খাওয়ার সময় চাপ না দিয়ে, একটি ইতিবাচক এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে তারা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।
৪. পুরস্কার পদ্ধতি: শিশুদের নতুন খাবার খাওয়ানোর সময় পুরস্কার পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। নতুন খাবার গ্রহণ করলে তাদের প্রিয় খেলনা বা অনুরাগের কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করতে পারেন।
অটিজম আক্রান্ত শিশুর খাবারের ওপর গবেষণা:
অনেক গবেষণা অটিজম আক্রান্ত শিশুদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রমাণ করেছে যে, খাদ্য ও পুষ্টির সঠিক প্রয়োগ তাদের আচরণগত এবং শারীরিক অবস্থার উন্নতি করতে পারে। গ্লুটেন ও কেসিনমুক্ত খাদ্য অনেক অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে, যেকোনো খাদ্যতালিকা বা ডায়েট পরিবর্তনের আগে একজন ডায়েটিশিয়ান বা চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।