অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) নিয়ে অনেক বাবা-মা এবং যত্নশীল ব্যক্তিরা একটি সাধারণ অভিযোগ করেন যে, অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চারা প্রায়ই কথা শোনে না বা তাদের কথা অনুসরণ করতে অক্ষম হয়। যদিও এটি হতাশাজনক হতে পারে, তবে এর পিছনে কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ রয়েছে, যা বোঝা গেলে বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। এই লেখায় আমরা অটিজম বাচ্চাদের কথা না শোনার পেছনের কারণগুলো এবং তাদের যত্নের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অটিজম বাচ্চারা কেন কথা শোনে না?
১. সামাজিক যোগাযোগের দুর্বলতা:
অটিজমের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো সামাজিক যোগাযোগের সমস্যাগুলি। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের অনেকেই অন্যদের সাথে সঠিকভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না, যার কারণে তারা অনেক সময় কথা শুনতে বা সেই অনুযায়ী সাড়া দিতে আগ্রহী থাকে না।
২. সংবেদনশীলতা সংক্রান্ত সমস্যা:
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা প্রায়ই অত্যন্ত সংবেদনশীল বা সংবেদনশীলতার অভাবে ভোগে। তারা উচ্চ শব্দ বা আলোতে অসুস্থ বোধ করতে পারে, যা তাদের মনোযোগ কমিয়ে দেয়। আবার কখনো কখনো তারা নির্দিষ্ট শব্দের প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে অন্য কোনো কিছুতে গভীরভাবে মনোযোগী থাকতে পারে।
৩. কেন্দ্রীভূত মনোযোগের অভাব:
অটিজম শিশুরা প্রায়ই একটি বিশেষ বিষয় বা কাজের উপর খুব বেশি মনোযোগ দেয় এবং অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়। ফলে, তাদের কাছে বার্তা পৌঁছাতে সময় লাগে।
৪. বোধগম্যতার সমস্যা:
অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশুর কাছে যোগাযোগের ধারণাটি বোধগম্য নয়। তারা অনেক সময় ভাষার অর্থ বা সংকেত সঠিকভাবে বুঝতে পারে না, ফলে তাদের সাথে কথা বলা আরও কঠিন হয়ে যায়।
করণীয়
১. সহজ ও পরিষ্কার ভাষা ব্যবহার করুন:
অটিজম শিশুরা অনেক সময় জটিল বাক্য বা নির্দেশনা বুঝতে পারে না। তাই তাদের সাথে কথা বলার সময় যতটা সম্ভব সহজ ভাষা ব্যবহার করুন। অল্প কথায় নির্দেশ দিন এবং প্রতিটি পদক্ষেপকে পরিষ্কার করে বলুন।
২. চোখের যোগাযোগ তৈরি করুন:
অটিজম শিশুরা প্রায়ই চোখে চোখে কথা বলতে সমস্যায় পড়ে। তাই, যতটা সম্ভব ধৈর্য ধরে তাদের সাথে চোখের যোগাযোগ স্থাপন করুন এবং তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করুন।
৩. ভিজ্যুয়াল সহায়তা ব্যবহার করুন:
অনেক অটিজম আক্রান্ত শিশু ভিজ্যুয়াল সহায়তা বা চিত্রভিত্তিক নির্দেশনা সহজে অনুসরণ করতে পারে। চিত্র, চার্ট বা ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করুন।
৪. ইতিবাচক উৎসাহ প্রদান করুন:
যদি বাচ্চারা নির্দেশনা অনুসরণ করে, তবে তাদের উৎসাহিত করুন। ইতিবাচক প্রশংসা ও উদ্দীপনা তাদেরকে আরও মনোযোগী করে তুলতে পারে।
৫. অনুশীলন ও থেরাপি:
আচরণগত থেরাপি বা ভাষা থেরাপি অটিজম আক্রান্ত শিশুরা কিভাবে অন্যদের সাথে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারে সে বিষয়ে সাহায্য করতে পারে। এই থেরাপিগুলোর মাধ্যমে তাদের কথা শোনার দক্ষতা বাড়ানো যায়।
উপসংহার
অটিজম বাচ্চারা প্রায়ই কথা শোনার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তবে সঠিক পদ্ধতিতে তাদের যত্ন ও প্রশিক্ষণ দিলে তারা উন্নতি করতে পারে। ধৈর্য, বোঝাপড়া, এবং সঠিক থেরাপির মাধ্যমে অটিজম শিশুদের কথা শোনার দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব। তাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ভিজ্যুয়াল সহায়তা, পরিষ্কার ভাষা, এবং ইতিবাচক উদ্দীপনা প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।