অটিজম বাচ্চার চয়েস মেকিং

অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চারা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে। চয়েস মেকিং বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সমস্যাগুলো সাধারণত যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা, শৃঙ্খলাবদ্ধ অভ্যাস, এবং অন্যদের প্রতি নির্ভরশীলতার কারণে হতে পারে। তবে সঠিক সহায়তা ও কৌশল ব্যবহার করে অটিজম বাচ্চাদের চয়েস মেকিং দক্ষতা উন্নয়ন করা সম্ভব।

অটিজম বাচ্চাদের চয়েস মেকিং সমস্যা

১. বিকল্পগুলোর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে অসুবিধা

অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চারা সাধারণত বিকল্পগুলোর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে কষ্ট পায়। তারা সহজেই বুঝতে পারে না কোন অপশনটি তাদের জন্য ভালো হতে পারে এবং কোনটি নয়। এই কারণে তারা প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট অপশনের মধ্যে আটকে যায় বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।

২. সুনির্দিষ্ট পছন্দের প্রতি নির্ভরতা

অনেক অটিজম বাচ্চা তাদের নিজস্ব সুনির্দিষ্ট পছন্দের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়। তারা নতুন জিনিস বা পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে কষ্ট পায়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নতুন বিকল্প গ্রহণের পরিবর্তে তারা প্রায়শই তাদের পুরনো এবং পরিচিত পছন্দে ফিরে যায়।

raju akon youtube channel subscribtion

৩. সামাজিক যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা

অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চারা প্রায়শই যোগাযোগের সমস্যার কারণে তাদের পছন্দ বা সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। তারা হয়তো তাদের অভ্যন্তরীণ অনুভূতিগুলো বুঝতে এবং তা প্রকাশ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, যার ফলে তাদের চয়েস মেকিং প্রক্রিয়াতে জটিলতা দেখা দেয়।

অটিজম বাচ্চাদের চয়েস মেকিং দক্ষতা উন্নয়নে কৌশল

১. ভিজ্যুয়াল সহায়তা প্রদান

অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করার জন্য ভিজ্যুয়াল সহায়তা ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবি, সাইন, বা চার্টের মাধ্যমে তাদের সামনে বিকল্পগুলো উপস্থাপন করা হলে তারা সহজেই পছন্দ করতে পারে। ভিজ্যুয়াল উপকরণ তাদের পছন্দগুলি বুঝতে এবং তা প্রকাশ করতে সাহায্য করে।

২. ছোট সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করা

অটিজম বাচ্চাদের চয়েস মেকিং দক্ষতা উন্নয়নে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করা উচিত। যেমন—কোন খেলনা খেলবে বা কী খাবার খাবে, এই ধরনের সহজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। পরবর্তীতে বড় ও জটিল সিদ্ধান্ত নিতেও তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

৩. পর্যায়ক্রমে নির্দেশনা প্রদান

চয়েস মেকিং প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে নির্দেশনা প্রদান অটিজম বাচ্চাদের জন্য কার্যকর হতে পারে। বিকল্পগুলোর মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে, ধীরে ধীরে প্রতিটি বিকল্প ব্যাখ্যা করে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করা উচিত। একবারে অনেকগুলো বিকল্প দিলে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়তে পারে, তাই পর্যায়ক্রমে নির্দেশনা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে হবে।

৪. ইতিবাচক উৎসাহ প্রদান

অটিজম বাচ্চাদের যখন সঠিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়, তখন তাদের ইতিবাচক উৎসাহ প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চয়েসের জন্য প্রশংসা বা পুরস্কার দেওয়া হলে তারা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার প্রতি আস্থা পাবে এবং ভবিষ্যতে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত হবে।

৫. সামাজিক কাহিনী ব্যবহার করা

সামাজিক কাহিনী (social stories) ব্যবহার করে অটিজম বাচ্চাদের চয়েস মেকিং দক্ষতা শেখানো সম্ভব। বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে গল্পের আকারে চয়েস মেকিংয়ের গুরুত্ব বোঝানো যায়। এতে করে বাচ্চারা চয়েস মেকিং পরিস্থিতিতে কীভাবে কাজ করবে, তা শেখার সুযোগ পায়।

উপসংহার

অটিজম বাচ্চাদের চয়েস মেকিংয়ের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও, সঠিক সহায়তা ও কৌশল ব্যবহার করে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব। ধাপে ধাপে শেখানো, ভিজ্যুয়াল সহায়তা প্রদান, এবং ইতিবাচক উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে তারা চয়েস মেকিংয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। এতে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য আসবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top