অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের (ASD) সঙ্গে থাকা শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আচরণগত সমস্যা দেখা যায়, যার মধ্যে কামড়ানো একটি সাধারণ সমস্যা। অনেক অভিভাবক ও পরিচর্যাকারী এই আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন এবং এটি কীভাবে সামলানো যায় তা নিয়ে ভাবেন। কামড়ানো এক ধরনের অনুভূতিমূলক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা শিশুর অস্বস্তি, হতাশা বা অন্য কোনো মানসিক অবস্থার প্রতিফলন।
এই লেখায় অটিজম বাচ্চাদের কামড়ানোর সম্ভাব্য কারণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
অটিজম বাচ্চারা কেন কামড়ায়?
১. যথাযথ যোগাযোগের অভাব
অটিজম শিশুদের অনেকেই সঠিকভাবে নিজেদের অনুভূতি এবং চাহিদা প্রকাশ করতে পারে না। তাদের কথা বলার বা যোগাযোগ করার সীমিত ক্ষমতা থাকতে পারে। যখন তারা কিছু বলতে বা অনুভূতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা কামড়ানোর মতো আচরণ প্রদর্শন করতে পারে।
২. অতিরিক্ত উত্তেজনা বা স্ট্রেস
অটিজম শিশুদের সাধারণত দৈনন্দিন জীবনের নানা পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত উত্তেজনা বা স্ট্রেস হতে পারে। তারা যখন অত্যধিক চাপ অনুভব করে, তখন এটি শারীরিক আচরণ যেমন কামড়ানোর মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে।
৩. ইন্দ্রিয়গত অনুভূতির পরিবর্তন (Sensory Issues)
অটিজম শিশুদের ইন্দ্রিয়গত সমস্যা থাকতে পারে, যেমন তীব্র শব্দ, আলো, বা অন্য কোনো ইন্দ্রিয়গত অভিজ্ঞতা তাদের অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারে। এই ইন্দ্রিয়গত উত্তেজনার কারণে তারা কামড়ানোর মতো আচরণ দেখাতে পারে।
৪. ব্যক্তিগত সীমা লঙ্ঘন
অনেক অটিজম শিশু স্পর্শ সংবেদনশীল হয় এবং তাদের ব্যক্তিগত সীমা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি তাদের ব্যক্তিগত স্থান বা শরীরের সীমা লঙ্ঘন করে, তখন তারা কামড়ানোর মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
৫. মনোযোগ আকর্ষণের জন্য
কিছু অটিজম শিশু মনোযোগ পেতে চাইলে কামড়ানোর মতো আচরণ প্রদর্শন করতে পারে। তারা বুঝতে পারে না কীভাবে স্বাভাবিকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়, তাই তারা এই ধরনের আচরণ ব্যবহার করতে পারে।
কামড়ানোর প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
১. যথাযথ যোগাযোগের কৌশল শেখানো
অটিজম শিশুরা যদি কথা বা সংকেত ব্যবহার করতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য বিকল্প যোগাযোগের কৌশল শেখানো প্রয়োজন। যেমন, পিকচার এক্সচেঞ্জ কমিউনিকেশন সিস্টেম (PECS), বা সংকেত ভাষা তাদের শেখানো যেতে পারে যাতে তারা সহজে নিজের চাহিদা প্রকাশ করতে পারে।
২. ইন্দ্রিয়গত থেরাপি
যদি কামড়ানো ইন্দ্রিয়গত সমস্যার কারণে ঘটে, তাহলে ইন্দ্রিয়গত থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। স্পেশালিস্ট থেরাপিস্টরা এই শিশুদের ইন্দ্রিয়গত সমস্যা মোকাবেলা করতে সহায়ক হয়। ইন্দ্রিয়গত সমস্যা কমাতে উপযুক্ত থেরাপি প্রয়োগ করলে তাদের কামড়ানোর প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।
৩. আচরণগত থেরাপি (Behavioral Therapy)
Applied Behavior Analysis (ABA) বা অন্যান্য আচরণগত থেরাপি ব্যবহার করে অটিজম শিশুদের কামড়ানোর মতো আচরণ মোকাবেলা করা যায়। এই ধরনের থেরাপি তাদের আচরণগত প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক হতে পারে।
৪. স্ট্রেস কমানোর পদ্ধতি
অটিজম শিশুদের স্ট্রেস বা উত্তেজনা কমাতে বিভিন্ন রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, সঠিক ব্রিদিং এক্সারসাইজ, সেন্সরি টুলস বা টেকনিক ব্যবহার করে তাদের চাপ কমানো সম্ভব।
৫. ইতিবাচক পুনরাবৃত্তি (Positive Reinforcement)
যখন শিশুটি কামড়ানো ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতিতে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে, তখন তাকে প্রশংসা বা পুরস্কার দিন। ইতিবাচক পুনরাবৃত্তি তাদের ভালো আচরণকে শক্তিশালী করতে সহায়ক হয়।
উপসংহার
অটিজম শিশুরা যখন কামড়ায়, তখন এটি তাদের অস্বস্তি, যোগাযোগের অভাব, বা ইন্দ্রিয়গত সমস্যার একটি বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। এই আচরণের পিছনের কারণগুলো বোঝা এবং সঠিক কৌশল প্রয়োগ করা জরুরি। সঠিক থেরাপি এবং শিক্ষামূলক কৌশলের মাধ্যমে তাদের এই আচরণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।