অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) হলো এক ধরনের নিউরোডেভেলপমেন্টাল বিকাশজনিত সমস্যা, যা শিশুর সামাজিক, আচরণগত এবং যোগাযোগের দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ এবং পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা দেখা যায়। অটিজম বিভিন্ন মাত্রায় হতে পারে, এবং এটি প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়।
অটিজমের লক্ষণসমূহ
অটিজম সাধারণত শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক বছরগুলোতে লক্ষণীয় হয়। প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- সামাজিক যোগাযোগের সমস্যা:
- চোখে চোখ রেখে কথা না বলা।
- বন্ধু তৈরি করতে বা অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে অসুবিধা।
- অন্যদের অনুভূতি বুঝতে বা তা প্রকাশ করতে অক্ষমতা।
- আচরণগত সমস্যা:
- একই ধরনের আচরণ বারবার করা (যেমন হাত দোলানো, ঘুরে দাঁড়ানো)।
- রুটিন পরিবর্তন বা নতুন পরিস্থিতির প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা।
- নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি অত্যাধিক আগ্রহ (যেমন গাড়ি, সংখ্যা বা খেলা)।
- ভাষাগত এবং যোগাযোগ সমস্যা:
- দেরিতে কথা বলা বা কথার অর্থ বুঝতে সমস্যা।
- ইশারার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা।
অটিজমের কারণ
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, তবে কিছু কারণ অটিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে:
- জেনেটিক্স: পরিবারের ইতিহাসে অটিজম থাকলে, এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- মস্তিষ্কের গঠন: মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের বিকাশের সমস্যা।
- পরিবেশগত কারণ: গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ, বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা ইত্যাদি।
অটিজমের চিকিৎসা
অটিজমের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে সঠিক থেরাপি ও সহায়তার মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা তাদের জীবনে উন্নতি করতে পারে। কিছু প্রচলিত থেরাপি হলো:
- বিহেভিয়র থেরাপি: শিশুদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।
- স্পিচ থেরাপি: কথা বলার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য থেরাপি।
- অকুপেশনাল থেরাপি: দৈনন্দিন কাজ ও সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য।
অভিভাবকদের করণীয়
অটিজম আক্রান্ত শিশুর জন্য বিশেষ সহায়তার প্রয়োজন। অভিভাবকরা শিশুকে ধৈর্য ধরে সাহায্য করতে পারেন, এবং সঠিক থেরাপি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুর বিকাশ ঘটাতে পারবেন।
উপসংহার
অটিজম কোনো অসুখ নয়, এটি মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি সমস্যা যা সঠিক সহায়তা ও থেরাপির মাধ্যমে শিশুর সামাজিক এবং আচরণগত উন্নয়ন সম্ভব।