অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) এমন একটি স্নায়ুবিক সমস্যা, যা সামাজিক যোগাযোগ, আচরণ ও বিকাশের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অটিজমের চিকিৎসার জন্য মূলত থেরাপি এবং ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেওয়া হয়। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় অটিজমের উন্নতির জন্য বিভিন্ন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ও থেরাপির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
অটিজম এর নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো কী কী?
বর্তমান গবেষণাগুলির মূল লক্ষ্য অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা। নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. জিন থেরাপি (Gene Therapy)
অটিজমের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জেনেটিক কারণ চিহ্নিত হয়েছে। জিন থেরাপির মাধ্যমে গবেষকরা এই জেনেটিক সমস্যাগুলো সনাক্ত করে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করছেন। যদিও এটি এখনো গবেষণা পর্যায়ে, তবে ভবিষ্যতে এটি অটিজমের চিকিৎসায় একটি বড় অগ্রগতি হতে পারে।
২. স্টেম সেল থেরাপি (Stem Cell Therapy)
স্টেম সেল থেরাপি একটি উদীয়মান চিকিৎসা পদ্ধতি, যা অটিজমসহ বিভিন্ন স্নায়ুবিক সমস্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এই থেরাপির মাধ্যমে শরীরে নতুন, সুস্থ স্নায়ু কোষ তৈরি করে মস্তিষ্কের উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। প্রাথমিকভাবে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল দেখা গেলেও, এটি নিয়ে আরো গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
৩. অক্সিটোসিন থেরাপি
অক্সিটোসিন হরমোন সামাজিক আচরণ এবং সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অক্সিটোসিন হরমোনের থেরাপি সামাজিকতা ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।
৪. ভর্টেক্স থেরাপি (Vortex Therapy)
এই পদ্ধতিতে অটিজম আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য বিশেষ ধরনের আলো ও সাউন্ড থেরাপির ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় বলে দাবি করা হয়।
৫. কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (Cognitive Behavioral Therapy – CBT)
সাম্প্রতিক কালে অটিজমের আচরণগত সমস্যা উন্নত করতে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই থেরাপির মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা তাদের নেতিবাচক আচরণকে চিহ্নিত করে তা পরিবর্তন করার কৌশল শিখে।
৬. মাইন্ডফুলনেস-বেজড থেরাপি
এই থেরাপি শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। মাইন্ডফুলনেস থেরাপি মূলত অটিজম আক্রান্ত শিশুদের আচরণ উন্নত করতে ও তাদের চিন্তা-ভাবনার ধারাকে স্থির করতে সাহায্য করে।
৭. ভ্যাকসিন ও ইমিউন সাপ্রেশন থেরাপি
গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে অটিজম ইমিউন সিস্টেমের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। এই থেরাপির মাধ্যমে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ ভ্যাকসিন বা ইমিউন সাপ্রেশন ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।
৮. নিউরোফিডব্যাক থেরাপি (Neurofeedback Therapy)
নিউরোফিডব্যাক একটি নতুন ধরনের থেরাপি, যেখানে মস্তিষ্কের তরঙ্গ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
৯. ডায়েটারি ইন্টারভেনশন
অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে খাদ্য সংবেদনশীলতা একটি সাধারণ সমস্যা। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশেষ ডায়েট যেমন গ্লুটেন-ফ্রি বা ক্যাসিন-ফ্রি ডায়েট অটিজমের কিছু লক্ষণ হ্রাস করতে পারে।
উপসংহার
অটিজমের ক্ষেত্রে প্রতিটি শিশুর জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা হতে পারে, এবং প্রতিটি শিশু তাদের নিজস্ব উন্নতির হার অনুযায়ী সাড়া দেয়। নতুন নতুন থেরাপি ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হলেও, অটিজমের পূর্ণ নিরাময় এখনো সম্ভব নয়। তবে সঠিক থেরাপি, ভালো যত্ন ও সমর্থনের মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব।