অটিজম এর আর্লি ডিটেকশন এবং ডায়াগনোসিস | What is Early Detection & Diagnosis of Autism?

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, যা সাধারণত শিশুদের প্রাথমিক বয়স থেকেই লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। অটিজমের প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সঠিকভাবে ডায়াগনোসিস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় থেরাপি ও চিকিৎসা সময়মতো শুরু করার সুযোগ দেয়।

অটিজমের আর্লি ডিটেকশন (Early Detection) কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রাথমিক পর্যায়ে অটিজম শনাক্ত করার মাধ্যমে শিশুর বিকাশে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল রয়েছে, যেখানে প্রাথমিক ডিটেকশন ও থেরাপি শিশুর সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হয়।

  1. বাড়ির পরিবেশে পর্যবেক্ষণ: শিশুর প্রতিদিনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার শিশু অন্যদের সাথে মেলামেশায় সমস্যা করছে বা তার ভাষাগত উন্নতি ধীর হচ্ছে, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
  2. শিক্ষকদের পর্যবেক্ষণ: শিশুর শিক্ষকগণও তাদের আচরণগত পরিবর্তন সম্পর্কে প্রথমে ধারণা দিতে পারেন। স্কুলে শিশুর সাথে কেমন আচরণ হচ্ছে, এবং তার শিক্ষায় অগ্রগতি কীভাবে হচ্ছে, তা জানাটা গুরুত্বপূর্ণ।

raju akon youtube channel subscribtion

অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ:

অটিজমের কিছু সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে, যা শিশুদের ২-৩ বছর বয়সে স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়:

  1. সামাজিক মেলামেশায় সমস্যা: শিশুর সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন অন্যদের চোখে চোখ রাখতে না পারা, বা খেলার সময় অন্য শিশুদের এড়িয়ে চলা।
  2. ভাষাগত সমস্যা: শিশু কথা বলতে শুরু করে দেরিতে, এবং তার ভাষাগত বিকাশ অন্যান্য শিশুদের থেকে ধীর হতে পারে।
  3. আচরণগত সমস্যা: একই কাজ বারবার করা, কোন একটি নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ, বা অতিরিক্ত রুটিনে আবদ্ধ থাকা।
  4. সেন্সরি ইস্যু: কিছু শিশু অতিরিক্ত সংবেদনশীল হতে পারে আলো, শব্দ, বা স্পর্শের প্রতি, যা তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে।

অটিজম ডায়াগনোসিস (Diagnosis):

অটিজম ডায়াগনোসিস নির্ভর করে শিশু বিশেষজ্ঞ, শিশুর আচরণ বিশ্লেষক এবং অন্য স্বাস্থ্য পেশাদারদের সম্মিলিত কাজের উপর। সাধারণত একটি বহুস্তরীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অটিজম নির্ণয় করা হয়।

  1. ডেভেলপমেন্টাল স্ক্রিনিং: ডেভেলপমেন্টাল স্ক্রিনিং শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ওপর একটি সাধারণ মূল্যায়ন প্রদান করে। এটি সাধারণত শিশুর ১৮-২৪ মাস বয়সে করা হয়।
  2. ডায়াগনস্টিক মূল্যায়ন: যদি ডেভেলপমেন্টাল স্ক্রিনিংয়ে কোন অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে, তখন আরও গভীরতর ডায়াগনস্টিক মূল্যায়ন করা হয়, যা শিশুর আচরণ, ভাষাগত দক্ষতা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো বিশ্লেষণ করে।
  3. বহুস্তরীয় টেস্টিং: শিশু বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানী শিশুর সঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষা করে, যেমন সামাজিক যোগাযোগ, ভাষা বিকাশ, এবং আচরণগত প্রবণতা বিশ্লেষণ করেন।

কীভাবে অটিজমের ডায়াগনোসিস নিশ্চিত করা যায়?

অটিজম নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞরা সাধারণত একাধিক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ADI-R (Autism Diagnostic Interview-Revised): এটি শিশুর অভিভাবকদের সাথে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শিশুর আচরণ এবং সামাজিক উন্নতির মূল্যায়ন করে।
  • ADOS (Autism Diagnostic Observation Schedule): এই টেস্টের মাধ্যমে শিশুদের সামাজিক ও যোগাযোগ দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়।

উপসংহার:

অটিজমের প্রাথমিক ডিটেকশন এবং ডায়াগনোসিস সময়মতো করলে শিশুর উন্নতির সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাই অভিভাবকদের উচিত প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং দ্রুত পেশাদারদের পরামর্শ নেওয়া। সঠিক থেরাপি এবং চিকিৎসার মাধ্যমে অটিজম শিশুর জীবনে উন্নতি আনা সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top