অটিজম একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত ব্যাধি, যা শিশুর সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, যোগাযোগের দক্ষতা এবং আচরণের বিভিন্ন সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। অনেক সময় সঠিক থেরাপি এবং সমর্থন সত্ত্বেও সন্তানের অটিজমের লক্ষণগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি নাও দেখা যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের হতাশ না হয়ে কিছু কৌশল অবলম্বন করা উচিত।
কেন উন্নতি হচ্ছে না?
- পর্যাপ্ত থেরাপি না হওয়া: প্রতিটি অটিজম আক্রান্ত শিশুর জন্য সুনির্দিষ্ট থেরাপি প্রয়োজন, এবং এটি পর্যাপ্ত না হলে সন্তানের উন্নতি ধীরগতিতে হতে পারে।
- যোগাযোগের বাধা: যদি শিশুর যোগাযোগের চর্চা না বাড়ানো হয়, তাহলে তার সামাজিক দক্ষতার বিকাশে সমস্যা হতে পারে।
- আচরণগত থেরাপির অভাব: অটিজম শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় বিহেভিয়ারাল থেরাপি না পাওয়ার ফলে তাদের আচরণগত সমস্যার উন্নতি হতে পারে না।
- পরিবেশগত বাধা: শিশুর চারপাশের পরিবেশ যদি উন্নতির জন্য সহায়ক না হয়, তবে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
করণীয় পদক্ষেপ:
- বিশেষজ্ঞদের সাথে পুনঃপর্যালোচনা: যদি সন্তানের অটিজমের উন্নতি না হয়, তবে তাকে নিয়মিত বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা থেরাপির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারবেন এবং নতুন উপায়ে সহায়তা করতে পারেন।
- থেরাপি পরিবর্তন: একাধিক ধরনের থেরাপি পরীক্ষা করার মাধ্যমে আপনার সন্তান কোনটিতে ভালো উন্নতি করছে তা মূল্যায়ন করা উচিত। বিশেষ করে:
- অকুপেশনাল থেরাপি
- স্পিচ থেরাপি
- বিহেভিয়ারাল থেরাপি
- শিক্ষামূলক প্ল্যান পুনর্বিবেচনা: অটিজম শিশুদের জন্য একটি ইন্ডিভিজ্যুয়ালাইজড এডুকেশন প্ল্যান (IEP) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নতি না হলে স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
- ধৈর্য ও স্থায়ী প্রচেষ্টা: অটিজমের উন্নতি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি এবং সময়সাপেক্ষ। সুতরাং, অভিভাবকদের ধৈর্য ধরে সন্তানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
- নিয়মিত উন্নতির মূল্যায়ন: আপনার সন্তানের থেরাপি এবং বিকাশের উপর নজর রাখুন। কোথায় অগ্রগতি হয়েছে, কোন এলাকায় আরও মনোযোগ প্রয়োজন তা নিয়মিত পর্যালোচনা করা উচিত।
- পরিবেশ সহায়ক করা: বাড়ির পরিবেশকে সহায়ক এবং উৎসাহব্যঞ্জক রাখুন। শিশুর সাথে ধৈর্য ধরে মিথস্ক্রিয়া বাড়ান এবং তার আগ্রহের বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিন।
- সাপোর্ট গ্রুপে অংশগ্রহণ: অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা বা সাপোর্ট গ্রুপে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে নতুন কৌশল এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়, যা সন্তানের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার:
অটিজম আক্রান্ত শিশুর উন্নতি সময়সাপেক্ষ এবং ধৈর্যের সাথে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ, থেরাপির পরিবর্তন, এবং সহায়ক পরিবেশ প্রদান করলে সন্তানের উন্নতি সম্ভব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কখনোই আশা হারাবেন না, বরং ধৈর্য ও ভালোবাসার মাধ্যমে সন্তানকে এগিয়ে নিতে থাকুন।