সেরিব্রাল পালসি: লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) একটি স্নায়ুবিক সমস্যা, যা মস্তিষ্কের বিকাশজনিত ত্রুটি বা ক্ষতির কারণে ঘটে। এটি সাধারণত জন্মের পূর্বে, জন্মের সময়, বা জন্মের পর শিশুর মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে দেখা দেয়। এই সমস্যাটি শরীরের চলাচল ও পেশীর নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রভাব ফেলে।

 সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ:

১. শরীরের চলাচলে অসুবিধা:

  • মোটর স্কিলের বিলম্ব: শিশুরা মাথা ঘোরা, বসা, হাঁটাচলার মতো সাধারণ কাজ করতে দেরি করে।
  • হাঁটা-চলার অস্বাভাবিকতা: শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখা বা সঠিকভাবে হাঁটা সম্ভব হয় না।
  • পেশী টানটান বা দুর্বলতা: কোনো কোনো শিশুর পেশী খুব শক্ত হয়, আবার কারো পেশী খুব দুর্বল থাকে, যার ফলে সঠিকভাবে নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. মাসল টোনের অস্বাভাবিকতা:

  • হাইপারটোনিয়া: পেশী খুব টানটান হয়ে থাকে এবং শিশু স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না।
  • হাইপোটোনিয়া: পেশী খুব দুর্বল থাকে এবং শিশু শরীরের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না।

৩. সমন্বয় ও ভারসাম্যহীনতা:

  • এট্যাক্সিয়া: হাত ও পায়ের চলাচলের সমন্বয়ে সমস্যা দেখা দেয়।
  • ঝাঁকুনি বা কাঁপুনি: কিছু শিশুর মধ্যে হাত বা পা কাঁপতে থাকে এবং এটি নির্দিষ্ট কোনো কাজ করার সময় বেশি দেখা যায়।

৪. রিফ্লেক্স সমস্যা:

  • আনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া: মস্তিষ্কের আঘাতের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে অসংলগ্ন এবং অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া হতে পারে।
  • স্টিফনেস বা খিঁচুনি: শিশুরা প্রায়শই শরীরের বিভিন্ন অংশে খিঁচুনি বা স্টিফনেস অনুভব করে।

৫. বাক ও ভাষার বিকাশে সমস্যা:

  • কথা বলার বিলম্ব: সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত কথা বলার ক্ষেত্রে দেরি করে।
  • কথা বলায় অস্পষ্টতা: তারা শব্দ পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে পারে না, বা শব্দের মধ্যে জড়তা থাকে।

৬. খাওয়া ও গিলতে সমস্যা:

  • গিলতে অসুবিধা: মস্তিষ্কের পেশী নিয়ন্ত্রণের অভাবের কারণে খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।
  • খাবার খাওয়ার সময় অস্বাভাবিক আচরণ: শিশুরা সাধারণত খাবার সঠিকভাবে চিবাতে বা গিলতে পারে না।

৭. মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা:

  • বুদ্ধিমত্তার কম বিকাশ: কিছু শিশুর ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা বা শিখন ক্ষমতায় সমস্যা দেখা যায়।
  • সেন্সরি সেনসিটিভিটি: তারা আলো, শব্দ, বা স্পর্শের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হতে পারে।

৮. আকস্মিক খিঁচুনি (Seizures):

  • অনেক শিশুর সেরিব্রাল পালসি থাকার কারণে আকস্মিক খিঁচুনি (Seizures) হতে পারে, যা মস্তিষ্কের স্নায়ুর কার্যক্রমের অস্বাভাবিকতার কারণে ঘটে।

 উপসংহার:

সেরিব্রাল পালসি একটি স্নায়ুবিক সমস্যা যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপর প্রভাব ফেলে। দ্রুত চিকিৎসা ও থেরাপি গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। সঠিক পরিচর্যা ও সহায়তার মাধ্যমে সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুরা একটি সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top