সিজোফ্রেনিয়া কেন হয়?

সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ, যার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে সিজোফ্রেনিয়ার পেছনে বিভিন্ন জৈবিক, মানসিক, এবং পরিবেশগত কারণ ভূমিকা রাখতে পারে। নিচে সিজোফ্রেনিয়া কেন হয়, তার সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. জেনেটিক (বংশগত) কারণ

সিজোফ্রেনিয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি হল বংশগত কারণ। যদি পরিবারের কোনো সদস্য সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অন্য সদস্যেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন বা অস্বাভাবিকতা রোগের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • যদি একজন অভিন্ন যমজ (মোনোজাইগোটিক) সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন, তাহলে অন্য যমজের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০%।
  • প্রথম ডিগ্রী আত্মীয় (যেমন: বাবা-মা, ভাইবোন) সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

২. মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা

সিজোফ্রেনিয়া রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট রাসায়নিকগুলির ভারসাম্যহীনতা। বিশেষত ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রার অস্বাভাবিকতা এই রোগের সাথে সম্পর্কিত। ডোপামিনের মাত্রা বেশি হলে হ্যালুসিনেশন এবং ডেলুশনের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

৩. মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকলাপ

গবেষণায় দেখা গেছে যে সিজোফ্রেনিয়ার রোগীদের মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকলাপে অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ যেমন ফ্রন্টাল লোব, টেম্পোরাল লোব, এবং ভেন্ট্রিকলগুলির আকার পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। এছাড়াও, মস্তিষ্কের কার্যকলাপে পরিবর্তন যেমন নিউরোনাল সংযোগের দুর্বলতা সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।

৪. পরিবেশগত কারণ

পরিবেশগত কারণও সিজোফ্রেনিয়া সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব কারণে মস্তিষ্কের গঠনে বা কার্যকলাপে পরিবর্তন আসতে পারে, যা পরবর্তীতে সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু সম্ভাব্য পরিবেশগত কারণের মধ্যে রয়েছে:

  • গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ: গর্ভাবস্থায় যদি মা কোনো সংক্রমণে আক্রান্ত হন, তাহলে সন্তানের সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • প্রসবজনিত জটিলতা: প্রসবের সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব বা অন্য কোন জটিলতা সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • শৈশবে ট্রমা: শৈশবে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন বা অবহেলা এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৫. মানসিক চাপ এবং মানসিক ট্রমা

সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো অনেক সময় মানসিক চাপ বা ট্রমার প্রেক্ষিতে শুরু হতে পারে। উচ্চ মাত্রার মানসিক চাপ, যেমন: কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো, বা সম্পর্কের ভাঙন, সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গগুলোর উদ্রেক করতে পারে।

৬. মাদকাসক্তি

কিছু মাদকদ্রব্য যেমন কোকেন, মারিজুয়ানা, বা এলএসডি সিজোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মাদকাসক্তি মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে, যা সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গগুলোর প্রকোপ বাড়াতে পারে।

উপসংহার

সিজোফ্রেনিয়া একটি বহুমুখী কারণের ফলাফল, যার পেছনে বংশগত কারণ থেকে শুরু করে পরিবেশগত এবং মানসিক কারণ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রভাব থাকে। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কারণগুলি এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে সঠিক চিকিৎসা এবং সমর্থন সিজোফ্রেনিয়ার উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে। যদি কেউ সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top