সাইকোসিস রোগটি কী?

সাইকোসিস হল একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যেখানে একজন ব্যক্তি বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা (ডেলুশন) এবং বিভ্রান্তি (হ্যালুসিনেশন) অনুভব করেন। এটি এক ধরনের গুরুতর মানসিক রোগ যা একজন ব্যক্তির চিন্তা, আবেগ, এবং আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সাইকোসিস রোগীর মানসিক অবস্থাকে ব্যাহত করে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।

raju akon youtube channel subscribtion

সাইকোসিসের লক্ষণ

সাইকোসিসের প্রধান লক্ষণগুলি নিম্নলিখিত হতে পারে:

  • ভ্রান্ত ধারণা (ডেলুশন): রোগী এমন কিছু বিশ্বাস করতে পারে যা বাস্তবে সত্য নয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ বিশ্বাস করতে পারে যে তাদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করা হচ্ছে বা তাদের ক্ষতি করা হচ্ছে।
  • বিভ্রান্তি (হ্যালুসিনেশন): রোগী বাস্তবে যা নেই তা দেখতে, শুনতে বা অনুভব করতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ হ্যালুসিনেশন হল শোনা (অডিটরি হ্যালুসিনেশন), যেখানে রোগী কণ্ঠ শুনতে পায়।
  • বিশৃঙ্খল চিন্তা: সাইকোসিস রোগীরা প্রায়ই চিন্তাগুলিকে সুসংবদ্ধভাবে প্রকাশ করতে অক্ষম হয়। তাদের কথা অসংলগ্ন হতে পারে এবং কথোপকথনে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যেতে পারে।
  • আচরণগত পরিবর্তন: আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অদ্ভুত আচরণ, আগ্রাসী মনোভাব বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
  • অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্নতা: রোগীরা প্রায়ই পরিবার, বন্ধু এবং সমাজ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেন এবং একাকী জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন।

সাইকোসিসের কারণ

সাইকোসিসের কারণগুলি নানা রকম হতে পারে এবং এগুলি একসাথে কাজ করে রোগ সৃষ্টি করতে পারে:

  • জৈবিক কারণ: মস্তিষ্কের রসায়নের অস্বাভাবিকতা, যেমন ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের ভারসাম্যহীনতা।
  • জেনেটিক কারণ: পারিবারিক ইতিহাস এবং জেনেটিক প্রবণতা।
  • মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ট্রমা বা বড় কোনো মানসিক আঘাত।
  • শারীরিক অসুস্থতা: নির্দিষ্ট শারীরিক অসুস্থতা যেমন মস্তিষ্কের টিউমার, সংক্রমণ বা পুষ্টিহীনতা।
  • মাদকের ব্যবহার: কিছু অবৈধ মাদক এবং অ্যালকোহল সাইকোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

সাইকোসিসের চিকিৎসা

সাইকোসিসের চিকিৎসা সাধারণত ওষুধ এবং কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে করা হয়:

  • অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ: এই ওষুধগুলি সাইকোসিসের লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ মস্তিষ্কের রসায়নকে প্রভাবিত করে ভ্রান্ত ধারণা ও বিভ্রান্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • কাউন্সেলিং ও থেরাপি: মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়মিত কাউন্সেলিং সেশন রোগীর মানসিক অবস্থা উন্নত করতে সহায়ক হয়। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) প্রায়ই ব্যবহৃত হয়, যা রোগীদের ভুল চিন্তা ও আচরণ পরিবর্তনে সহায়তা করে।
  • মনোসামাজিক সমর্থন: পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সমর্থন রোগীর চিকিৎসা প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজের সঠিক সমর্থন রোগীর সুস্থতায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

সাইকোসিস থেকে সুস্থ হওয়া

সাইকোসিস থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সময়সীমা ব্যক্তি বিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু মানুষ দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে, আবার কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা হলে, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

উপসংহার

সাইকোসিস হল একটি গুরুতর মানসিক রোগ, যা একজন ব্যক্তির বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হতে বাধ্য করে। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা এবং মনোসামাজিক সমর্থন মাধ্যমে সাইকোসিস থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

Writer:
Raju Akon, MPhil-DU, Counselling Psychologist at PMHCC.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top