বর্তমান সময়ে শিশুর জ্বর হলে কী করবেন: করণীয় পদক্ষেপ ও সতর্কতা

শিশুরা সাধারণত বিভিন্ন ভাইরাস ও সংক্রমণের কারণে জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে, এবং বর্তমানে এই সমস্যা আরও বেশি দেখা যাচ্ছে। জ্বর শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়ার একটি অংশ, যা শরীরে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তবে জ্বর বেশি হলে শিশুর জন্য তা বিপজ্জনক হতে পারে। তাই শিশুর জ্বর হলে সঠিক যত্ন নেওয়া ও কিছু করণীয় বিষয় মেনে চলা জরুরি।

শিশুর জ্বরের সাধারণ লক্ষণ:

শিশুর জ্বর হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:

  • শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি
  • মাথাব্যথা
  • শরীর ব্যথা
  • চোখের নীচে ফোলা ভাব
  • ক্ষুধামন্দা
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ঘাম হওয়া অথবা শরীর কাঁপা

শিশুর জ্বর হলে করণীয়:

১. শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন:

শিশুর জ্বর হলে তার শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করে জ্বরের মাত্রা মাপুন। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা যদি ১০০.৪°F (৩৮°C) বা তার বেশি হয়, তবে তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. শিশুকে পর্যাপ্ত তরল খাওয়ান:

জ্বরের সময় শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার দেওয়া জরুরি। শিশু যদি মায়ের দুধ পান করে, তবে তাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান। বড় শিশুদের পানি, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন। এতে শিশুর শরীরে পানির অভাব পূরণ হবে।

৩. জ্বর কমানোর জন্য গরম কাপড় না পরান:

শিশুর জ্বর হলে তাকে খুব বেশি গরম কাপড় পরানো উচিত নয়। হালকা কাপড় পরিয়ে দিন এবং ঘর ঠাণ্ডা রাখুন, যাতে শিশুর শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বের হতে পারে।

৪. প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন:

শিশুর জ্বর কমাতে সাধারণত প্যারাসিটামল (জ্বর কমানোর ওষুধ) ব্যবহার করা হয়। তবে ওষুধ দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং শিশুর ওজন অনুযায়ী সঠিক ডোজ দেওয়া জরুরি।

৫. ফোম দিয়ে শরীর মুছে দিন:

শিশুর শরীর বেশি গরম হলে ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো ফোম বা তোয়ালে দিয়ে শিশুর শরীর মুছে দিতে পারেন। এটি শিশুর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। তবে খুব বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার না করে হালকা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা ভালো।

৬. শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিন:

জ্বর হলে শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে যায়, তাই তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। তাকে বিছানায় শুইয়ে দিন এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।

৭. জ্বরের কারণ নির্ণয় করুন:

শিশুর জ্বরের কারণ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাইরাল ইনফেকশন, ঠান্ডা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টনসিলাইটিস বা অন্যান্য সংক্রমণজনিত কারণে জ্বর হতে পারে। যদি জ্বর ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৮. শিশুর খাওয়া-দাওয়া মনিটর করুন:

জ্বর হলে শিশুরা সাধারণত খেতে চায় না। তবে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি না পায়। তাই হালকা খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন, যেমন খিচুড়ি, স্যুপ, ফলমূল ইত্যাদি।

৯. ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

জ্বর ১০২°F বা তার বেশি হলে, যদি জ্বরের সাথে বমি, খিঁচুনি, তীব্র শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষ করে নবজাতকদের (৩ মাসের কম বয়সী) জ্বর হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

শিশুর জ্বর প্রতিরোধে করণীয়:

  • শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • শিশুর খাবার ও পানীয় নিরাপদ এবং পরিষ্কার রাখুন।
  • ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখুন এবং মশা বা জীবাণু থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।
  • নিয়মিত টিকা দেওয়ার মাধ্যমে শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন।

উপসংহার:

শিশুর জ্বর হলে তাকে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল গ্রহণ, এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার মাধ্যমে জ্বরের তীব্রতা কমানো সম্ভব। তবে জ্বরের কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুর সুস্থতার জন্য প্রতিদিনের যত্ন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top