মানব শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে, যাকে হাইপোথার্মিয়া (Hypothermia) বলা হয়। হাইপোথার্মিয়া তখন ঘটে যখন শরীরের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থা, যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে প্রাণঘাতী হতে পারে।
আসুন, জেনে নিই শরীরের তাপমাত্রা কেন কমে যায় এবং কীভাবে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণ:
১. ঠান্ডা পরিবেশে দীর্ঘ সময় থাকা
শীতকালীন ঠান্ডা আবহাওয়ায় বা ঠান্ডা পানিতে বেশি সময় কাটালে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। শরীরের চামড়ার মাধ্যমে তাপ ক্ষয় হয় এবং শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়।
২. পোশাকের অপর্যাপ্ততা
শীতকালে পর্যাপ্ত গরম পোশাক না পরা বা ঠান্ডা পরিবেশে খোলা শরীর নিয়ে থাকা শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।
৩. দুর্বল রক্ত সঞ্চালন
রক্ত সঞ্চালনের সমস্যার কারণে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তি বা রক্ত সঞ্চালনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এ সমস্যার সম্মুখীন হন।
৪. অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ
অ্যালকোহল রক্তনালীকে প্রসারিত করে এবং শরীর থেকে তাপ দ্রুত বের করে দেয়, যার ফলে তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।
৫. দুর্বলতা বা ক্লান্তি
দীর্ঘ সময় খাওয়া-দাওয়া না করা বা ক্লান্ত অবস্থায় শরীরের শক্তি কমে গেলে শরীর নিজস্ব তাপ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়।
৬. ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করা কমে যাওয়া) অনুভব করতে পারেন, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।
৭. নিম্ন রক্তচাপ
নিম্ন রক্তচাপের কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না এবং কমে যায়।
শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ:
- শরীর শীতল হয়ে যাওয়া
- অনবরত কাঁপুনি
- অস্পষ্ট কথা বলা
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাঘাত (মেমরি লস, বিভ্রান্তি)
- ধীর বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কমে যাওয়া
শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে করণীয়:
১. উষ্ণ স্থানে চলে আসা
শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে দ্রুত কোনো উষ্ণ স্থানে চলে আসা উচিত। শীতকালীন বা ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দ্রুত সরিয়ে উষ্ণ স্থানে নিয়ে আসা সবচেয়ে জরুরি।
২. গরম পোশাক পরানো
তাপমাত্রা কমে গেলে তাত্ক্ষণিকভাবে গরম কাপড় দিয়ে শরীর মুড়িয়ে দেওয়া উচিত। কম্বল, জ্যাকেট, স্কার্ফ, মোজা ইত্যাদি পরিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করুন।
৩. গরম পানীয় পান করা
গরম পানীয় যেমন স্যুপ, চা, কফি ইত্যাদি পান করা শরীরের তাপমাত্রা পুনরুদ্ধারে সহায়ক। তবে অ্যালকোহল বা ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. হালকা ব্যায়াম করা
শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন, যেমন হাঁটা বা হালকা স্ট্রেচিং। তবে খুব বেশি ক্লান্ত বা দুর্বল হলে ব্যায়াম না করাই ভালো।
৫. ভেজা কাপড় সরিয়ে গরম কাপড় পরানো
যদি ভেজা কাপড় পরে থাকেন, তবে তা দ্রুত পরিবর্তন করে শুকনো ও গরম কাপড় পরাতে হবে। ভেজা কাপড় শরীর থেকে তাপ আরও দ্রুত বের করে দেয়।
৬. বাহ্যিক তাপের উৎস ব্যবহার
বৈদ্যুতিক হিটার বা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করে শরীরকে উষ্ণ রাখতে পারেন। তবে সরাসরি তাপ না দিয়ে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখা উচিত, যাতে পোড়া বা ত্বকের ক্ষতি না হয়।
শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া প্রতিরোধের উপায়:
- শীতকালে গরম কাপড় পরা এবং আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানো।
- শীতল আবহাওয়ায় দীর্ঘ সময় বাইরে না থাকা।
- পর্যাপ্ত খাবার ও পানি গ্রহণ করা।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল পরিহার করা।
- বয়স্ক ও শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া এবং তাদের উষ্ণ পরিবেশে রাখা।
উপসংহার:
শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া একটি গুরুতর অবস্থা, যা দ্রুত চিকিৎসা না করলে মারাত্মক হতে পারে। তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যথাযথ পোশাক, গরম পানীয় এবং উষ্ণ স্থানে থাকার মাধ্যমে শরীরকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।