বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মধ্যে মোবাইল এবং ট্যাবলেটের অতিরিক্ত ব্যবহার একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষত, অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (ASD) আক্রান্ত শিশুরা প্রযুক্তির প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি থেকে বিকাশে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এই মোবাইল আসক্তি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে সামাজিক, যোগাযোগমূলক, এবং আচরণগত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তবে সঠিক পদক্ষেপ এবং থেরাপির মাধ্যমে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মোবাইল আসক্তির কারণ:
১. সুবিধাজনক পলায়ন: মোবাইলের মাধ্যমে সহজে ভিডিও, গেম এবং কার্টুন দেখে শিশুরা আসল পৃথিবী থেকে নিজেদের আলাদা করতে পারে। ২. আকর্ষণীয় কন্টেন্ট: অ্যানিমেটেড ভিডিও এবং গেমের উজ্জ্বল রঙ, সাউন্ড ইফেক্ট শিশুদের সহজেই আকৃষ্ট করে। ৩. অভিভাবকদের ব্যস্ততা: অনেক সময় অভিভাবকরা শিশুদের শান্ত রাখার জন্য মোবাইল হাতে ধরিয়ে দেন, যা শিশুদের আসক্ত করে তোলে।
মোবাইল আসক্তির নেতিবাচক প্রভাব:
১. বাধাগ্রস্ত সামাজিক বিকাশ: মোবাইলের প্রতি আসক্ত শিশুদের সামাজিক মেলামেশা এবং যোগাযোগ দক্ষতা কমে যায়। ২. আচরণগত সমস্যা: মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করার সময় শিশুরা অস্থির, চিৎকার-চেঁচামেচি বা অন্য কোনও আচরণগত সমস্যা প্রদর্শন করে। ৩. শারীরিক সমস্যা: অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল ব্যবহারের ফলে শিশুর চোখের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, এবং অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। ৪. সেন্সরি বিকাশে বাধা: মোবাইলের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা শিশুর সেন্সরি বিকাশেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন সেন্সরি ইনপুট ঠিকমতো প্রসেস করতে না পারা।
মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে করণীয়:
১. রুটিন তৈরি: শিশুর প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে মোবাইল ব্যবহারের সময় নিয়ন্ত্রিত হয়। ২. সেন্সরি থেরাপি: সেন্সরি থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের সেন্সরি ইন্টিগ্রেশনকে উন্নত করা সম্ভব, যা তাদের বিকাশে সহায়ক হয়। ৩. সামাজিক কার্যক্রম: শিশুকে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা উচিত, যেমন খেলার মাঠে খেলা, বই পড়া ইত্যাদি। ৪. ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি: শিশুকে শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা মোবাইলের প্রতি আকর্ষণ কমিয়ে শরীর ও মনকে সজীব রাখে।
থেরাপির গুরুত্ব:
অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য পেশাদার থেরাপির মাধ্যমে মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অকুপেশনাল থেরাপি, সেন্সরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, এবং বিহেভিয়ারাল থেরাপির মাধ্যমে শিশুরা মোবাইলের বিকল্প কার্যক্রমে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
অভিভাবকদের ভূমিকা:
অভিভাবকদের সচেতনতা এবং সমর্থন এই আসক্তি কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং শিশুদের সাথে মানসম্মত সময় কাটানো মোবাইল আসক্তি কমাতে সহায়ক।
উপসংহার:
মোবাইল আসক্তি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জীবনে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে, তবে সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে এবং পেশাদার থেরাপির সহায়তা নিলে শিশুর জীবন পরিবর্তন করা সম্ভব। প্রযুক্তির বিকল্প কার্যক্রম এবং অভিভাবকদের সচেতন ভূমিকা শিশুকে পুনরায় সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।