মিউকাস দূর করার উপায়: কার্যকর ঘরোয়া এবং চিকিৎসা পদ্ধতি

মিউকাস বা শ্লেষ্মা শরীরের একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা আমাদের শ্বাসনালীতে প্রদাহের কারণে সৃষ্টি হয়। তবে অতিরিক্ত মিউকাস জমে গেলে শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, এবং কাশি হতে পারে। বিশেষ করে ঠান্ডা, ফ্লু, অ্যালার্জি, ব্রংকাইটিস বা ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে মিউকাস জমে। তাই দ্রুত মিউকাস দূর করা জরুরি। কিছু প্রাকৃতিক এবং চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে মিউকাস দূর করা সম্ভব।

মিউকাস জমার কারণ:

১. ঠান্ডা ও ফ্লু

ঠান্ডা এবং ফ্লুর কারণে শ্বাসনালীতে মিউকাস তৈরি হয়। এ সময় শ্বাসনালীতে প্রদাহ দেখা দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. অ্যালার্জি

ধুলা, পরাগ, পশুর লোম বা অন্যান্য অ্যালার্জি উদ্রেককারী পদার্থের কারণে শ্বাসনালীতে মিউকাস জমা হয়।

৩. ধূমপান

ধূমপান শ্বাসনালীতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং মিউকাসের উৎপাদন বাড়ায়।

৪. ফুসফুসের সংক্রমণ

ব্রংকাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণের কারণে শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি হয়।

৫. এ্যাসিড রিফ্লাক্স

গ্যাস্ট্রিক এসিড শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে গলা এবং শ্বাসনালীতে মিউকাস জমতে পারে।

মিউকাস দূর করার উপায়:

১. গরম পানি পান করা

গরম পানি মিউকাসকে পাতলা করে এবং তা সহজে শ্বাসনালী থেকে বের হতে সাহায্য করে। দিনে কয়েকবার গরম পানি পান করলে মিউকাস দ্রুত কমে যায়।

২. লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা

লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে এবং জমে থাকা মিউকাস দূর করতে কার্যকর। আধা চামচ লবণ এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার গার্গল করা উচিত।

৩. বাষ্প গ্রহণ করা

গরম পানির বাষ্প শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে মিউকাসকে ঢিল করে দেয়। গরম পানির বাষ্প ৫-১০ মিনিট মুখ ঢেকে গ্রহণ করা দ্রুত মিউকাস দূর করতে সাহায্য করে।

৪. মধু ও আদা মিশ্রণ

মধু এবং আদা উভয়ই গলার প্রদাহ কমায় এবং মিউকাস দূর করতে সাহায্য করে। এক চামচ মধুর সাথে আদার রস মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার সেবন করুন।

৫. অ্যান্টি-হিস্টামিন ও ডিকনজেস্টেন্ট

যদি অ্যালার্জি বা সংক্রমণের কারণে মিউকাস জমা হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-হিস্টামিন বা ডিকনজেস্টেন্ট ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৬. প্রচুর পানি পান করা

পর্যাপ্ত পানি পান করলে মিউকাস পাতলা হয়ে যায় এবং তা সহজে বের হয়। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

৭. মশলাদার খাবার

মশলাদার খাবার, যেমন মরিচ, মিউকাস কমাতে সাহায্য করে। এসব খাবার খেলে শ্বাসনালী থেকে মিউকাস সহজে বের হয়ে যায়।

৮. হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা

ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে বাতাসে আর্দ্রতা বজায় থাকে, যা শ্বাসনালীতে মিউকাস জমতে দেয় না এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে।

৯. এ্যাসিড রিফ্লাক্স নিয়ন্ত্রণ করা

মিউকাস যদি এ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে হয়, তবে এসিডিটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন।

প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ:

  • ধূমপান পরিহার করা।
  • ঠান্ডা এবং অ্যালার্জি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা।
  • ঘরে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখা।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

উপসংহার:

মিউকাস জমা হওয়া শারীরিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে, তবে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে এটি দূর করা সম্ভব। গরম পানি পান, লবণ পানি দিয়ে গার্গল, বাষ্প গ্রহণ এবং মধু-আদার মিশ্রণ নিয়মিত গ্রহণ করলে মিউকাস দ্রুত নিরাময় হয়। তবে দীর্ঘস্থায়ী মিউকাস জমা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top