খাবার খাওয়ার সময় অনেকেরই বুক বা গলায় খাবার আটকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এটি একধরনের অস্বস্তিকর এবং কখনও কখনও বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতে পারে। বুকের মধ্যে খাবার আটকে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সাধারণ কারণ যেমন দ্রুত খাওয়া, খাদ্যনালীতে কোনো সমস্যা, অথবা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স (GERD) হতে পারে। সঠিকভাবে কারণ চিহ্নিত করে সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বুকে খাবার আটকে যাওয়ার কারণসমূহ:
১. খাদ্যনালীর সংকোচন (Esophageal Stricture):
কিছু মানুষের খাদ্যনালী সংকুচিত হয়ে যায়, যা খাবার গিলতে সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে খাবার খাদ্যনালীতে আটকে গিয়ে বুকের মধ্যে অস্বস্তি হতে পারে। এই সমস্যার চিকিৎসা না করলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।
২. গ্যাসট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD):
GERD সমস্যায় পেটে থাকা অ্যাসিড বা খাবার গলা বা বুকে ফিরে আসে, যা বুকের মধ্যভাগে ব্যথা বা চাপ অনুভব করায়। এতে খাবার সহজে গলাতে সমস্যা হয় এবং খাবার আটকে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
৩. খাদ্যনালীর প্রদাহ (Esophagitis):
খাদ্যনালীতে প্রদাহ বা ইনফেকশন হলে খাবার গিলতে সমস্যা হয়। এটি সাধারণত খাদ্যনালীর সংক্রমণ, অ্যাসিড রিফ্লাক্স, বা কিছু ওষুধের কারণে হতে পারে। এই প্রদাহের ফলে বুকে খাবার আটকে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে।
৪. দ্রুত খাওয়ার অভ্যাস:
খাবার দ্রুত খাওয়ার ফলে অনেক সময় খাবার সঠিকভাবে চিবানো হয় না, ফলে বড় আকারের খাবার খাদ্যনালীতে আটকে যেতে পারে। এছাড়া দ্রুত খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণে হাওয়া গিলে ফেলার সম্ভাবনাও বেশি থাকে, যা বুকের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে।
৫. খাদ্যনালীতে টিউমার:
খাদ্যনালীতে টিউমার বা কোনো ধরনের গঠনগত সমস্যা থাকলে খাবার আটকে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা এবং এর জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।
বুকে খাবার আটকে যাওয়ার প্রতিকার:
১. ভালভাবে চিবিয়ে খাবার খাওয়া:
খাবার গিলে ফেলার আগে অবশ্যই ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। বড় আকারের খাবার গিলে ফেললে তা খাদ্যনালীতে আটকে যেতে পারে, তাই প্রতিটি খাবার ছোট ছোট টুকরো করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
২. উঁচু বালিশে ঘুমানো:
যাদের GERD সমস্যা আছে, তারা খাবার খাওয়ার পরে উঁচু বালিশে শুয়ে ঘুমালে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা কিছুটা কমে। এটি খাবার গলার মধ্যে ফিরে আসা প্রতিরোধে সহায়ক।
৩. অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা:
অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খেলে পেট ফেঁপে যায় এবং খাবার গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই অতিরিক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
৪. গরম পানি পান করা:
খাবার আটকে গেলে হালকা গরম পানি ধীরে ধীরে পান করলে তা নেমে যেতে পারে। তবে খুব গরম পানি খেলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ:
যদি বারবার খাবার আটকে যাওয়ার সমস্যা হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যনালীতে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে ডাক্তারি পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
উপসংহার:
বুকে খাবার আটকে যাওয়ার সমস্যা স্বাভাবিক কারণে হতে পারে, আবার এটি খাদ্যনালীর সমস্যা বা অন্য কোনো জটিলতার লক্ষণও হতে পারে। সঠিকভাবে চিবিয়ে খাওয়া এবং খাবারের পর সতর্কতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। তবে নিয়মিত এই সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।