বদহজম (Indigestion) বা ডিসপেপসিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে খাবার গ্রহণের পর পাকস্থলীতে অস্বস্তি অনুভূত হয়। এটি প্রায়শই পাকস্থলীতে পুড়ে যাওয়ার অনুভূতি, গ্যাস, পেট ফাঁপা এবং অম্বলজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। বদহজম অনেকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে। এর ফলে শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনযাপনে অসুবিধা দেখা দেয়। তাই বদহজমের কারণ এবং প্রতিকার জানা খুবই জরুরি।
বদহজমের লক্ষণ
বদহজমের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে যা শরীরে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। নিচে বদহজমের সাধারণ লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো:
- পেট ফাঁপা ও গ্যাস: বদহজমের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো পেট ফাঁপা এবং গ্যাস জমা হওয়া।
- পেটের ব্যথা: পাকস্থলীতে চাপ অনুভব করা বা হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা।
- অম্বল: বুকের মাঝখানে পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি বা অম্বল।
- বমিভাব: বদহজম হলে প্রায়ই বমি আসার অনুভূতি হয়।
- খাদ্য হজমে অসুবিধা: খাবার গ্রহণের পর অস্বস্তি এবং পেটের ভারী ভাব।
- ডাকার (Belching): বারবার ঢেঁকুর তোলা।
- শ্বাসকষ্ট: বদহজমের কারণে কখনো কখনো শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে।
- বমি হওয়া: গুরুতর বদহজমের ক্ষেত্রে বমি হতে পারে।
বদহজমের কারণ
বদহজমের কারণ বিভিন্ন হতে পারে। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, এবং কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা বদহজম সৃষ্টি করতে পারে। নিচে বদহজমের কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
- খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার, তৈলাক্ত খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার, এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খেলে বদহজম হতে পারে।
- খাদ্য অ্যালার্জি: নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে বদহজম হতে পারে।
- দ্রুত খাবার খাওয়া: দ্রুত খাবার খাওয়া হলে পেট হজমের জন্য সময় পায় না, ফলে বদহজম হয়।
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ: চা, কফি, অ্যালকোহল, এবং কোমল পানীয় বেশি পরিমাণে খাওয়ার কারণে পাকস্থলী প্রভাবিত হয়।
- মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ বদহজমের অন্যতম কারণ।
- ধূমপান: ধূমপানের কারণে পাকস্থলীর কার্যকারিতা কমে, যা বদহজমের কারণ হতে পারে।
- কিছু ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ যেমন ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি বদহজমের কারণ হতে পারে।
- স্বাস্থ্য সমস্যা: গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS), গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) ইত্যাদি বদহজমের কারণ হতে পারে।
বদহজমের প্রতিকার
বদহজম থেকে মুক্তি পেতে কিছু সহজ উপায় রয়েছে। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করলে বদহজমের সমস্যা দূর করা সম্ভব।
১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত, মশলাযুক্ত, এবং ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকুন।
- একবারে বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে বারবার অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন।
- খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়বেন না। খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন।
২. পানি পানের অভ্যাস
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে বদহজমের সমস্যা কমে যায়। খাবার খাওয়ার সময় অল্প পানি পান করুন, তবে খাওয়ার পর প্রচুর পানি পান করা ভালো।
৩. ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
ধূমপান ও অ্যালকোহল বদহজমের সমস্যা বাড়ায়। তাই এগুলি থেকে বিরত থাকা উচিত।
৪. চা ও ক্যাফেইন গ্রহণ কমানো
অতিরিক্ত চা বা কফি খেলে বদহজম বাড়তে পারে। তাই দিনে সীমিত পরিমাণে এগুলো গ্রহণ করুন।
৫. হালকা ব্যায়াম
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করলে শরীরের হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বদহজমের সমস্যা কমে যায়।
৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বদহজমের অন্যতম কারণ। তাই নিয়মিত যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
৭. বদহজম নিরাময়ে ঘরোয়া উপায়
- আদা চা: বদহজম দূর করতে আদা চা খাওয়া যেতে পারে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং অস্বস্তি কমায়।
- পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতার রস হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং বদহজমের সমস্যা কমায়।
- জিরা পানি: জিরা পানি বদহজমের অন্যতম কার্যকরী প্রতিকার। এটি হজমে সহায়ক এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।
উপসংহার
বদহজম একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এবং কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে বদহজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে নিয়মিত বদহজমের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬