পেঁয়াজ দিয়ে জ্বর আনার উপায়: বাস্তবতা এবং মিথ

পেঁয়াজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা, যা বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ও গন্ধ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও পেঁয়াজকে বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া প্রতিকারের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই মনে করেন যে, পেঁয়াজ ব্যবহারে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জ্বর আনা সম্ভব, যা এক প্রকার মিথ। জ্বর হলো শরীরের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া, যা তখনই দেখা দেয় যখন শরীরে কোনো সংক্রমণ, প্রদাহ বা ভাইরাস থাকে।

তবে, পেঁয়াজের ব্যবহারকে ঘিরে কিছু প্রচলিত ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে, যা প্রাকৃতিকভাবে শরীরের আরাম ও নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে। নিচে পেঁয়াজের কিছু কার্যকর পদ্ধতি আলোচনা করা হলো যা জ্বরের জন্য প্রতিরক্ষামূলক হতে পারে।

পেঁয়াজ দিয়ে জ্বর প্রশমনের কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি:

১. পেঁয়াজের রস দিয়ে পায়ের তলায় ম্যাসাজ

অনেকে মনে করেন, পেঁয়াজের রস দিয়ে পায়ের তলায় ম্যাসাজ করলে শরীরের তাপমাত্রা কমতে পারে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে আসে। এটি মূলত রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং আরাম দেয়। পেঁয়াজের মধ্যে থাকা সালফার যৌগগুলি এ কাজে সহায়তা করে বলে বিশ্বাস করা হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. পেঁয়াজের টুকরা কেটে মোজায় রাখা

পেঁয়াজের টুকরা কেটে তা মোজার মধ্যে রেখে রাতে ঘুমানোর সময় পায়ে পরলে, শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে বলে দাবি করা হয়। যদিও এই পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবে অনেকেই একে প্রাকৃতিক আরামের জন্য ব্যবহার করেন।

৩. পেঁয়াজ দিয়ে গরম প্যাক

পেঁয়াজের টুকরা হালকা গরম করে, তা ঠাণ্ডা হবার পর কপালে বা শরীরের অন্য কোনো জায়গায় রাখা যেতে পারে। এই পদ্ধতিটি কিছুটা আরাম দিতে পারে, বিশেষ করে মাথা ব্যথা বা হালকা জ্বরের ক্ষেত্রে। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠাণ্ডা করতে পারে।

৪. পেঁয়াজের রস ও মধু মিশিয়ে খাওয়া

পেঁয়াজের রস ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি জ্বরের সময় শরীরকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়ক হতে পারে।

৫. গলা ব্যথা ও সর্দির উপশমে পেঁয়াজ

পেঁয়াজে থাকা সালফার যৌগগুলি শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং সর্দি-কাশি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে গলা ব্যথা বা সর্দির সময় পেঁয়াজ কেটে তা শ্বাস নেওয়া হলে কিছুটা আরাম পাওয়া যেতে পারে।

পেঁয়াজের উপকারিতা:

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস: পেঁয়াজে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।
  • শরীরের টক্সিন বের করে: পেঁয়াজের রস শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: পেঁয়াজ নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হয়।

সতর্কতা:

যদিও পেঁয়াজের কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি জনপ্রিয়, তবে এগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই জ্বর বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শুধু পেঁয়াজের ওপর নির্ভর না করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

উপসংহার:

পেঁয়াজ একটি প্রাকৃতিক খাদ্য, যা আমাদের শরীরে অনেক উপকার করতে পারে। তবে, পেঁয়াজ দিয়ে জ্বর আনা সম্ভব নয়। বরং জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। পেঁয়াজের প্রাকৃতিক গুণাবলী থেকে আরাম পাওয়া গেলেও, এটি জ্বর নিরাময়ের একমাত্র উপায় নয়।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top