দাঁত শিরশির করার সমস্যা, যা সাধারণত ডেন্টাল সেনসিটিভিটি নামে পরিচিত, অনেকের জন্য একটি অস্বস্তিকর অবস্থা। এটি সাধারণত ঠান্ডা, গরম, টক বা মিষ্টি খাবার বা পানীয় গ্রহণের সময় দাঁতে শিরশির অনুভূতি সৃষ্টি করে। দাঁত শিরশির করার প্রধান কারণ দাঁতের এনামেল ক্ষয় বা মাড়ির ক্ষতি, যা দাঁতের অভ্যন্তরীণ স্নায়ুকে সংবেদনশীল করে তোলে।
দাঁত শিরশির করার কারণ
১. দাঁতের এনামেল ক্ষয়
দাঁতের বাইরের প্রটেকটিভ স্তর এনামেল যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে দাঁতের অভ্যন্তরীণ স্নায়ু বের হয়ে যায়। এর ফলে দাঁত ঠান্ডা বা গরম কিছু স্পর্শ করলে শিরশির করতে শুরু করে। অতিরিক্ত শক্ত দাঁত ব্রাশ করা বা অম্লীয় খাবার খাওয়ার কারণে এনামেল ক্ষয় হতে পারে।
২. মাড়ি ক্ষয়
মাড়ির ক্ষয় হলে দাঁতের শিকড় (root) উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, যা দাঁতকে আরও সংবেদনশীল করে তোলে। মাড়ির সমস্যা বা জিঞ্জিভাইটিসের কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
৩. দাঁত ক্র্যাক বা ফাটল (Cracked Teeth)
দাঁতের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়লে বা কোন দুর্ঘটনায় দাঁত ফেটে যেতে পারে। দাঁতের ফাটল থেকে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে দাঁতে শিরশির ভাব অনুভূত হয়।
৪. দাঁত বাঁধানো বা ফিলিং করা দাঁত
যাদের দাঁতে ফিলিং আছে, তাদের ক্ষেত্রে ফিলিংয়ের সমস্যা বা দাঁতে রক্ষিত ধাতু ফিলিংয়ের কারণে দাঁত শিরশির করতে পারে।
৫. টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশে থাকা রাসায়নিক উপাদান
কিছু টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশে থাকা অতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদান দাঁতের স্নায়ুকে সংবেদনশীল করতে পারে। বিশেষত যদি অতিরিক্ত শক্তিশালী টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা হয়, তবে দাঁতে শিরশির ভাব সৃষ্টি হতে পারে।
দাঁত শিরশির করলে করণীয়
১. সেন্সিটিভিটির জন্য বিশেষ টুথপেস্ট ব্যবহার করা
দাঁত শিরশির করার সমস্যা কমাতে বাজারে বিশেষ ধরনের সেনসিটিভ টুথপেস্ট পাওয়া যায়, যা দাঁতের স্নায়ু সংরক্ষণে সাহায্য করে। এই ধরনের টুথপেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করলে দাঁতের শিরশির ভাব অনেকটাই কমে যায়।
২. মৃদু ব্রাশিং অভ্যাস করা
অতিরিক্ত চাপ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন টুথব্রাশ বেছে নেওয়া উচিত যা নরম ব্রিসলযুক্ত, এবং দিনে দু’বার মৃদুভাবে ব্রাশ করা উচিত।
৩. অম্লীয় খাবার এড়িয়ে চলা
খাবার তালিকায় অতিরিক্ত অম্লীয় খাবার থাকলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে। যেমন- লেবু, কমলালেবু, টমেটো ইত্যাদি অম্লীয় খাবার কম খাওয়া উচিত এবং খাবার খাওয়ার পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা উচিত।
৪. মাউথওয়াশ ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা
মাউথওয়াশের অতিরিক্ত ব্যবহার দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। এলকোহলমুক্ত এবং মৃদু মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত যাতে দাঁতের ক্ষতি না হয়।
৫. ফ্লুরাইড থেরাপি
দাঁতের এনামেল মজবুত করার জন্য ডেন্টিস্ট ফ্লুরাইড থেরাপি দিতে পারেন। ফ্লুরাইড দাঁতের বাইরের স্তরকে শক্তিশালী করে এবং সংবেদনশীলতা কমায়।
৬. ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া
দাঁত শিরশির করা যদি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে এবং কোনো পণ্য ব্যবহারেও উন্নতি না হয়, তাহলে ডেন্টিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ডেন্টিস্ট দাঁতের সঠিক সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবেন।
দাঁত শিরশির করার সমস্যা প্রতিরোধে টিপস
- প্রতিদিন নিয়মিত দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লস করা।
- মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী টুথপেস্ট এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করা।
- টুথপেস্ট ব্যবহার করার পর মুখ ধোয়ার সময় বেশি পানি ব্যবহার না করা, কারণ এটি টুথপেস্টের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
- দাঁতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বছরে অন্তত দু’বার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া।
উপসংহার
দাঁত শিরশির করার সমস্যা একটি অস্বস্তিকর অবস্থা হলেও এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সঠিক সময়ে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিয়ে এবং সঠিক যত্ন নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত মুখের যত্ন নেওয়া এবং দাঁত সংবেদনশীলতা কমানোর জন্য উপযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে শিরশির করার সমস্যাটি অনেকটাই কমে আসে।