ডায়রিয়া একটি সাধারণ রোগ যা শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক পর্যন্ত যেকোনো বয়সে হতে পারে। এটি মূলত পানির মতো পাতলা মলত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যা শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের করে দেয়। ডায়রিয়া একাধিক কারণে হতে পারে, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো জীবাণু সংক্রমণ। ডায়রিয়ার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে ডায়রিয়া হয়।
ডায়রিয়া রোগের জীবাণুর নাম:
ডায়রিয়ার জন্য দায়ী প্রধান জীবাণু হলো:
১. ব্যাকটেরিয়া:
বেশ কিছু ব্যাকটেরিয়া ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। যেমন:
- ই. কোলাই (Escherichia coli): দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- স্যালমোনেলা (Salmonella): দূষিত খাবার বা পানি থেকে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে।
- শিজেলা (Shigella): দূষিত খাদ্য বা পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।
- ক্যাম্পিলোব্যাক্টর (Campylobacter): দূষিত মাংস বা পানির মাধ্যমে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।
২. ভাইরাস:
ডায়রিয়া অনেক সময় ভাইরাসের সংক্রমণেও হতে পারে। যেমন:
- রোটাভাইরাস (Rotavirus): শিশুদের ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
- নোরোভাইরাস (Norovirus): খাদ্য সংক্রমণের কারণে এটি ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।
- অ্যাডেনোভাইরাস (Adenovirus): এটি শিশুদের ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ।
৩. প্রটোজোয়া বা পরজীবী (Parasites):
পরজীবী সংক্রমণও ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। যেমন:
- জিআরডিয়া (Giardia): দূষিত পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া সৃষ্টি করে।
- ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম (Cryptosporidium): এটি পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়ে অন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে।
- অ্যামিবা (Entamoeba histolytica): এটি অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি বা রক্তাক্ত ডায়রিয়ার কারণ।
ডায়রিয়ার প্রতিকার:
১. ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ORS):
ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা পুনরায় পূরণ করতে ORS খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি পানির পরিমাণ ঠিক রাখে এবং শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে।
২. বিশুদ্ধ পানি পান করুন:
ডায়রিয়া থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পানি ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে পান করা সবচেয়ে ভালো।
৩. হালকা ও সহজ পাচ্য খাবার গ্রহণ করুন:
ডায়রিয়ার সময় হালকা খাবার যেমন, খিচুড়ি, স্যুপ, কলা, পাউরুটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। তেল, মশলাযুক্ত বা ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. প্রোবায়োটিক গ্রহণ করুন:
প্রোবায়োটিক খাবার যেমন দই, ছানা ইত্যাদি অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে। এটি ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াল ব্যালেন্স রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন:
যদি ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়:
- খাবার ও পানি সবসময় পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ করতে হবে।
- দূষিত পানি বা খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
- হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে খাওয়া উচিত, বিশেষ করে টয়লেট ব্যবহারের পর।
- রাস্তার খাবার বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
উপসংহার:
ডায়রিয়া একটি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক রোগ হতে পারে, বিশেষত যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং ডিহাইড্রেশন তৈরি করে। ডায়রিয়ার জীবাণু সঠিকভাবে সনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। এছাড়াও সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।