ঘুমের ওষুধ বেশি খেলে করণীয়

ঘুমের ওষুধ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ, যা সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অসাবধানতাবশত বা ভুলবশত অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়া হতে পারে। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, রক্তচাপের পরিবর্তনসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঘুমের ওষুধ অতিরিক্ত খেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ঘুমের ওষুধ বেশি খেলে কী কী সমস্যা হতে পারে:

১. অবচেতন অবস্থা
অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ফলে রোগী অবচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনের ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হতে পারে। এমনকি শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।

৩. রক্তচাপ কমে যাওয়া
ঘুমের ওষুধ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, যা অচেতনতা বা হার্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৪. পেশীর নিয়ন্ত্রণ হারানো
অতিরিক্ত ওষুধ খেলে পেশীর শক্তি হ্রাস পায়, ফলে রোগী চলাফেরা করতে বা শারীরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

৫. অত্যধিক ঘুম
অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেলে রোগীর অবিরাম ঘুমের প্রবণতা হতে পারে, যা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ঘুমের ওষুধ বেশি খেলে করণীয়:

১. ডাক্তারের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন

অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেলে প্রথমেই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে তা জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। চিকিৎসক দ্রুত রোগীর শারীরিক অবস্থা নির্ণয় করবেন এবং সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

২. অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন

রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে দেরি না করে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে এবং নিকটস্থ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে।

৩. রোগীকে সজাগ রাখার চেষ্টা করুন

যদি রোগী এখনও জ্ঞান হারায়নি, তবে তাকে সজাগ রাখার চেষ্টা করুন। পানির মধ্যে লবণ মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন, যাতে বমির মাধ্যমে ওষুধ শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। তবে, যদি রোগী জ্ঞান হারায়, তবে তার মুখে কিছু দেওয়া উচিত নয়।

৪. অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে দিন

রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হলে, অক্সিজেন মাস্ক বা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে তাকে সাহায্য করা যেতে পারে।

৫. বমি করানোর চেষ্টা করবেন না

ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া ঘরে বসে বমি করানোর চেষ্টা করা উচিত নয়, কারণ এটি রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটাতে পারে।

৬. চিকিৎসার মাধ্যমে ডিটক্সিফিকেশন

হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসক ডিটক্সিফিকেশন বা ওষুধের প্রভাব দূর করার জন্য বিশেষ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই চিকিৎসার মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত ওষুধ দ্রুত বের করা হয়।

ঘুমের ওষুধ সেবনের সময় সতর্কতা:

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খাবেন না: ঘুমের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ সেবন বিপজ্জনক হতে পারে।
  • ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করুন: চিকিৎসকের দেওয়া মাত্রায় ওষুধ খাওয়া উচিত এবং তা নিয়মিত পালন করতে হবে।
  • ওষুধের প্যাকেটের নির্দেশিকা পড়ুন: ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই এর প্যাকেটের নির্দেশিকা পড়ে নিতে হবে, যাতে সঠিক মাত্রা এবং সতর্কতা মেনে চলা যায়।
  • অন্যান্য ওষুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন: ঘুমের ওষুধ অন্য ওষুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়। এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

উপসংহার:

অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেলে তা মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ভুলবশত অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করা হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top