গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়: ঝুঁকি ও প্রতিকার

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, যা সাধারণত গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) নামে পরিচিত, গর্ভকালীন সময়ে অনেক নারীর মধ্যেই দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরের ইনসুলিন কার্যকারিতায় কিছু পরিবর্তন আসে, যার ফলে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অবস্থায় যদি গর্ভবতী মা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখেন, তবে তা বাচ্চার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার ক্ষতি

১. ম্যাক্রোসোমিয়া (Macrosomia)

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণে মায়ের রক্তে উচ্চ গ্লুকোজের মাত্রা বাচ্চার শরীরেও পৌঁছায়। এর ফলে বাচ্চার অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই অবস্থাকে ম্যাক্রোসোমিয়া বলে, যেখানে বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়ে যায়। বড় বাচ্চা হওয়ার কারণে প্রসবের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন সিজারিয়ান সেকশন বা যন্ত্রের মাধ্যমে প্রসবের প্রয়োজন হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. নবজাতকের হাইপোগ্লাইসেমিয়া

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে বাচ্চার জন্মের পরে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যেতে পারে। বাচ্চার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেশি থাকায় এটি ঘটে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

৩. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা (Respiratory Distress Syndrome)

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে জন্মের পর নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। রেস্পিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম নবজাতকের ফুসফুসের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটায়, যার ফলে বাচ্চার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।

৪. প্রি-টার্ম জন্ম (Preterm Birth)

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণে প্রি-টার্ম বা সময়ের আগেই বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণত কম ওজনের সমস্যা এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৫. জন্ডিস (Jaundice)

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে নবজাতকের মধ্যে জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদিও জন্ডিস সাধারণত গুরুতর হয় না এবং কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, তবে জন্মের পরে এটি বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।

৬. ট্র্যাঙ্কিয়েন্ট ট্যাকিপনিয়া (Transient Tachypnea)

এই অবস্থায় নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যায়। এটি সাধারণত জন্মের পরপরই দেখা দিতে পারে এবং কিছু সময় পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়, তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

৭. দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মা থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা বড় হয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার ঝুঁকিতে থাকতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং বাচ্চার স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব কমাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

  • আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল, শাকসবজি, এবং কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • মিষ্টি ও উচ্চ গ্লুকোজযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম, রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
  • ব্যায়াম করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৩. রক্তে গ্লুকোজ নিয়মিত পরীক্ষা

  • গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করা জরুরি। গ্লুকোজের মাত্রা বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. ইনসুলিন বা ওষুধ

  • কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের ইনসুলিন ইনজেকশন বা ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
  • ইনসুলিন বা অন্যান্য ডায়াবেটিসের ওষুধ নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে তা মায়ের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি বাচ্চার জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা, জীবনধারা পরিবর্তন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং সুস্থ বাচ্চার জন্ম দেওয়া সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top