কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার কি? লক্ষণ কারণ ও চিকিৎসা কি?

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার (Conduct Disorder) হলো একটি গুরুতর আচরণগত এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত শৈশব বা কিশোর বয়সে দেখা দেয়। এই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুরা বা কিশোররা সাধারণ সামাজিক নিয়ম এবং আইন মেনে চলতে অক্ষম হয় এবং গুরুতর আচরণগত সমস্যায় ভোগে। তারা প্রায়ই আক্রমণাত্মক, সহিংস এবং অসামাজিক আচরণ করে, যা তাদের চারপাশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারের লক্ষণ

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত নিম্নলিখিত আচরণগুলো প্রদর্শন করে:

  1. আক্রমণাত্মক আচরণ:
    • অন্যদের ক্ষতি করার ইচ্ছা, মারামারি, এবং হুমকি দেওয়া।
    • প্রাণী বা মানুষের ওপর শারীরিক আক্রমণ চালানো।
    • অস্ত্র ব্যবহার করে আঘাত করা।
  2. অসামাজিক এবং প্রতারণামূলক আচরণ:
    • চুরি করা, জালিয়াতি করা, এবং অন্যদের মিথ্যা বলা।
    • অন্যান্যদের বিশ্বাস ভঙ্গ করা এবং প্রতারণা করা।
    • আইন ভঙ্গ করে চলা, যেমন গাড়ি চুরি, দোকান থেকে পণ্য চুরি করা ইত্যাদি।
  3. সম্পত্তির ক্ষতি:
    • ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের সম্পত্তি ধ্বংস করা।
    • আগুন লাগানো বা ভাঙচুর করা।
  4. গুরুতর নিয়ম ভঙ্গ:
    • নিয়মিত স্কুলে না যাওয়া বা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া।
    • অন্যের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা।

raju akon youtube channel subscribtion

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারের কারণ

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, তবে এটি জৈবিক, মানসিক এবং পরিবেশগত বিভিন্ন কারণের সমন্বয়ে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • জিনগত কারণ: পরিবারের মধ্যে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার বা মানসিক রোগের ইতিহাস থাকলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতা: মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের কার্যকারিতা কমে গেলে বা সমস্যায় পড়লে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার দেখা দিতে পারে।
  • মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি: যেমন ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, বা এডিএইচডি।
  • পরিবার এবং সামাজিক পরিবেশ: পরিবারে সহিংসতা, অবহেলা, অথবা অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার দেখা দিতে পারে।

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে। চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো শিশুর আচরণ উন্নত করা, সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা, এবং তাদের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা। চিকিৎসার কিছু পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  1. বিহেভিয়ারাল থেরাপি:
    • কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির (CBT) মাধ্যমে শিশুদের আচরণ পরিবর্তনে সহায়তা করা হয়। এটি শিশুকে তার চিন্তাধারা, আচরণ এবং অনুভূতি পরিবর্তন করতে শেখায়।
  2. পারিবারিক থেরাপি:
    • পরিবারকে সম্পৃক্ত করে থেরাপির মাধ্যমে শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পরিবারকে কিভাবে শিশুর সাথে আচরণ করতে হবে এবং কীভাবে তাকে সহায়তা করতে হবে তা শেখানো হয়।
  3. ঔষধের ব্যবহার:
    • যদি কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডারের সাথে অন্য কোনো মানসিক রোগ যেমন ডিপ্রেশন বা এডিএইচডি থাকে, তবে সেগুলোর চিকিৎসার জন্য ঔষধ ব্যবহৃত হতে পারে।
  4. শিক্ষাগত এবং সামাজিক সহায়তা:
    • বিশেষ শিক্ষা এবং স্কুলে সহায়তার মাধ্যমে শিশুকে তার আচরণ উন্নত করতে সহায়তা করা হয়।

উপসংহার

কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যা শিশুর স্বাভাবিক জীবন এবং তার চারপাশের মানুষদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সময়মত সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। পরিবারের সমর্থন এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার আক্রান্ত শিশুরা একটি ভালো ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে পারে।

প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগস:

#কন্ডাক্টডিসঅর্ডার #মানসিকস্বাস্থ্য #শিশুস্বাস্থ্য #কগনিটিভবিহেভিয়ারালথেরাপি #বাংলা


Raju Akon – Counseling Psychologist
Pinel Mental Health Care Centre,
222/1B, South Pirerbag, Mirpur-2, Dhaka -1216
📞 ফোন: 01681006726

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top