অতিরিক্ত থুথু তৈরি হওয়া বা লালারসের অতিরিক্ত উৎপাদনকে মেডিক্যাল ভাষায় “হাইপেরসলিভেশন” বা “সিয়ালোরিয়া” বলা হয়। এটি বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে এবং বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে এর বেশ কিছু কার্যকর সমাধান রয়েছে, যা সমস্যাটি দূর করতে সহায়ক হতে পারে। এখানে অতিরিক্ত থুথু তৈরির কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
অতিরিক্ত থুথু তৈরির কারণ
১. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, বিশেষ করে এন্টিপারকিনসোনিয়ান ওষুধ বা মনস্তাত্ত্বিক ওষুধ, অতিরিক্ত থুথু তৈরির কারণ হতে পারে।
২. পেটের সমস্যা: অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত লালা তৈরি হতে পারে, যা গলায় জ্বালা বা বমি বমি ভাব তৈরি করে।
৩. মুখের ইনফেকশন বা দাঁতের সমস্যা: দাঁতের সমস্যা বা মাড়ির সংক্রমণ থাকলে লালা বেশি তৈরি হতে পারে।
৪. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় অতিরিক্ত থুথু তৈরি হয়।
৫. নার্ভাস সিস্টেমের সমস্যা: কিছু স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণে যেমন পারকিনসন্স রোগে থুথু তৈরি নিয়ন্ত্রণের অভাব দেখা দিতে পারে।
৬. অ্যালার্জি: খাবার বা আবহাওয়ার কারণে অ্যালার্জি হলে থুথুর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত থুথু দূর করার উপায়
১. পানি পান বৃদ্ধি করুন: পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের আর্দ্রতা ঠিক থাকে এবং থুথুর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন।
২. মসলা বা লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ: কিছু মসলা বা লবণযুক্ত খাবার খেলে থুথুর উৎপাদন কমতে পারে। যেমন, শুকনো আদা চুষে খাওয়া যেতে পারে, যা লালারস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৩. মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন: অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ বা অ্যালকোহলযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে লালারস কমে আসে। এটি মুখের ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমিয়ে ফেলে।
৪. মেডিটেশন ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম: অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে থুথুর পরিমাণ বাড়তে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে স্নায়ুতন্ত্র স্বাভাবিক থাকে এবং থুথুর উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হয়।
৫. অ্যান্টি-অ্যাসিড ওষুধ গ্রহণ করুন: যদি থুথু তৈরির কারণ হয় অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টি-অ্যাসিড ওষুধ গ্রহণ করুন।
৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অন্য কোনো গুরুতর শারীরিক অবস্থার কারণে অতিরিক্ত থুথু তৈরি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ পরিবর্তন করা যেতে পারে।
৭. চুইংগাম চিবান: চিনিমুক্ত চুইংগাম চিবানোর ফলে মুখের ব্যস্ততা থাকে এবং অতিরিক্ত থুথু তৈরি নিয়ন্ত্রিত হয়।
চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হলে
- যদি অতিরিক্ত থুথু তৈরির সাথে শ্বাসকষ্ট, বমি বা অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়।
- যদি সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে।
- যদি মুখের ইনফেকশন বা দাঁতের সমস্যা থাকে যা চিকিৎসা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত থুথু তৈরি অস্বস্তিকর হতে পারে, তবে এটি সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এবং কিছু সহজ পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং মুখের সঠিক যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যাটি সহজেই সমাধান করা সম্ভব। তবে যদি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থাকে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।