অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) একটি নিউরোলজিক্যাল অবস্থা, যেখানে বাচ্চাদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ এবং আচরণগত বিকাশে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা যায়। অটিজমের বাচ্চারা প্রায়ই স্বতন্ত্র চয়েস এবং পছন্দের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব একটি পৃথিবী তৈরি করে থাকে। তাদের চয়েস বুঝে নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী সাহায্য করা গুরুত্বপূর্ণ।
অটিজম বাচ্চার চয়েস বুঝতে হলে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:
১. সংবেদনশীলতা এবং পছন্দ:
অটিজম বাচ্চারা সাধারণত নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি বেশি সংবেদনশীল বা আগ্রহী হয়ে থাকে। এটি হতে পারে খেলনা, খাবার, শব্দ বা নির্দিষ্ট কিছু ক্রিয়াকলাপ। বাচ্চার এই চয়েসগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন এবং তাদের পছন্দ অনুযায়ী এগিয়ে যান।
উদাহরণ:
- কিছু অটিজম বাচ্চা একটি নির্দিষ্ট রং বা গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।
- কিছু বাচ্চা আবার নির্দিষ্ট ধরনের টেক্সচার বা খেলনার প্রতি আগ্রহী হতে পারে।
২. রুটিন ও শৃঙ্খলা:
অটিজম বাচ্চারা প্রায়ই নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করতে ভালোবাসে। তাদের এই শৃঙ্খলা বা নির্দিষ্ট নিয়ম মানা চয়েসের একটি বড় অংশ। শৃঙ্খলা থেকে সরলে তাদের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
করণীয়:
- বাচ্চাকে তার রুটিন অনুযায়ী সময় দিন এবং নতুন কিছু প্রয়োগ করার আগে তাকে ধীরে ধীরে বুঝিয়ে দিন।
৩. খাবার ও পুষ্টি সংক্রান্ত পছন্দ:
অটিজম বাচ্চাদের মধ্যে খাবার পছন্দের ক্ষেত্রেও একটি বড় ভিন্নতা দেখা যায়। কিছু খাবার তারা এড়িয়ে চলে বা নির্দিষ্ট ধরনের খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকে।
করণীয়:
- বাচ্চার খাবারের প্রতি যে পছন্দ রয়েছে, তা অনুসরণ করুন এবং পুষ্টি বজায় রেখে নতুন খাবার তাকে পরিচয় করানোর চেষ্টা করুন।
৪. মনের গভীরতা এবং সৃজনশীলতা:
অটিজম বাচ্চাদের মধ্যে প্রায়ই গভীর সৃজনশীলতা এবং বিশেষজ্ঞ বিষয়গুলোতে তাদের চয়েস থাকে। তারা নির্দিষ্ট কোন খেলা, পাজল, বা আর্টের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।
করণীয়:
- বাচ্চার সৃজনশীলতাকে স্বীকৃতি দিন এবং তাদের পছন্দের কাজে উৎসাহিত করুন।
৫. যোগাযোগের পছন্দ:
অটিজম বাচ্চাদের অনেকেই কথা বলার মাধ্যমে যোগাযোগে কিছুটা অসুবিধা অনুভব করতে পারে। তারা অন্য উপায়ে তাদের চয়েস প্রকাশ করতে পারে যেমন, ইশারা, ছবি, অথবা ট্যাবলেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করা।
করণীয়:
- বাচ্চার সাথে বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করুন যেমন, ছবি ব্যবহার করে যোগাযোগ করা, সহজ ভাষা এবং ধৈর্যশীলতা দেখানো।
৬. শারীরিক স্পর্শ ও যোগাযোগ:
অনেক অটিজম বাচ্চারা শারীরিক স্পর্শের প্রতি সংবেদনশীল হয়। তারা কখনও কখনও অযাচিত স্পর্শ বা নির্দিষ্ট ধরনের স্পর্শ সহ্য করতে পারে না। তাদের স্পর্শের পছন্দগুলিকে সম্মান করা জরুরি।
করণীয়:
- বাচ্চার স্পর্শ পছন্দকে বিবেচনায় রেখে তাকে আলিঙ্গন বা স্পর্শ করুন।
৭. খেলার ধরণ এবং সামাজিকতা:
অটিজম বাচ্চারা প্রায়ই একা খেলতে পছন্দ করে এবং সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে থাকে। এটি তাদের চয়েসের অংশ হতে পারে। তবে ধীরে ধীরে সামাজিকভাবে অন্য বাচ্চাদের সাথে মেলামেশা করানো তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
করণীয়:
- তার খেলার ধরণ বুঝে তাকে ধীরে ধীরে সামাজিকতার দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। কিন্তু তাকে জোর করতে যাবেন না।
উপসংহার:
অটিজম বাচ্চাদের পছন্দ ও চয়েসগুলো তাদের স্বতন্ত্রতা ও ব্যতিক্রমী ক্ষমতাকে নির্দেশ করে। তাদের চয়েসগুলো সম্মান করা, বুঝে নেওয়া এবং তাদের সাথে ধৈর্য সহকারে আচরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদের উচিত বাচ্চার চয়েসগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী তাদের সাহায্য করা। অটিজম বাচ্চাদের সাথে সময় দিয়ে, ভালোভাবে বোঝার মাধ্যমে তাদের জীবনের মান উন্নত করা যায়।