অটিজম কি জেনেটিক?

অটিজম একটি জটিল নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, যা শিশুদের সামাজিক, ভাষাগত, এবং আচরণগত বিকাশে প্রভাব ফেলে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের (ASD) কারণগুলি এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে জেনেটিক বা বংশগত কারণ অটিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

১. অটিজম কি শুধুই জেনেটিক?

অটিজম পুরোপুরি জেনেটিক না হলেও, এটি জেনেটিক এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টরের মিশ্রণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে অটিজমের অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক প্রভাব প্রবল, তবে কিছু পরিবেশগত কারণও ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন গর্ভাবস্থার সময় মায়ের স্বাস্থ্য, প্রসবের সময় সমস্যা, বা কিছু বিশেষ পরিবেশগত বিষয়গুলিও অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

২. জেনেটিক ফ্যাক্টরের ভূমিকা:

বিভিন্ন জেনেটিক মিউটেশন বা পরিবর্তন অটিজমের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, জেনেটিক মিউটেশন শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব ফেলে, যা অটিজমের লক্ষণগুলো সৃষ্টি করতে পারে। কিছু জেনেটিক ফ্যাক্টর নিম্নলিখিতভাবে অটিজমের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে:

  • জিনের মিউটেশন: কিছু নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তন অটিজমের জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের মধ্যে যদি অটিজমের ইতিহাস থাকে, তবে শিশুর অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • মাল্টিপল জিনের ভূমিকা: একক জিন পরিবর্তনের চেয়ে একাধিক জিনের পরিবর্তন অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

৩. অটিজমের জেনেটিক প্রভাবের প্রমাণ:

  • যমজ শিশুদের গবেষণা: যমজ শিশুদের নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি এক যমজ শিশুর অটিজম থাকে, তবে দ্বিতীয় যমজ শিশুরও অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, বিশেষ করে যদি তারা একজিগোটিক (এক ডিম্বাণু থেকে গঠিত) যমজ হয়।
  • পারিবারিক ইতিহাস: যদি একজন শিশুর ভাই বা বোন অটিজমে আক্রান্ত হয়, তবে পরিবারের অন্য শিশুরও এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. অটিজম কি শুধুই জেনেটিক?

যদিও জেনেটিক কারণ অটিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবুও কিছু পরিবেশগত ফ্যাক্টরও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন:

  • গর্ভাবস্থায় সমস্যাঃ গর্ভাবস্থার সময় মায়ের অসুস্থতা, উচ্চ রক্তচাপ, বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যাগুলি শিশুর বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • প্রসবের সময় সমস্যা: জন্মের সময় কম ওজন বা অক্সিজেনের অভাব থাকলেও অটিজমের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • পরিবেশগত বিষক্রিয়া: কিছু রাসায়নিক পদার্থ বা টক্সিনের সংস্পর্শেও অটিজমের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৫. জেনেটিক পরীক্ষা:

অটিজমের সঠিক জেনেটিক কারণ নির্ধারণ করতে জেনেটিক পরীক্ষা বা কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। যদিও এই পরীক্ষা অটিজম নির্ণয়ে ১০০% নিশ্চিত তথ্য দেয় না, তবে এটি ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করতে পারে।

উপসংহার

অটিজমের কারণ সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানা বাকি থাকলেও, জেনেটিক ফ্যাক্টর এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনেটিক এবং পরিবেশগত ফ্যাক্টরের মিলিত প্রভাব অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য প্রারম্ভিক পর্যায়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top